বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস এক অনন্য প্রতিভার অধিকারী যিনি ক্ষুদ্রঋণ ধারণার জনক এবং গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা। তার অর্থনৈতিক দর্শন ও সামাজিক উদ্যোগ সারা বিশ্বে দারিদ্র্য বিমোচনের মডেল হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
২০০৬ সালে তিনি এবং তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন। এ প্রবন্ধে তার জীবন, কর্ম এবং বিশ্বব্যাপী প্রভাব নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হবে।
- পেজ সুচিপত্র: বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড: মুহাম্মদ ইউনুস
- বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ড: মুহাম্মদ ইউনুস
- শৈশব ও শিক্ষাজীবন
- গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা ও প্রতিষ্ঠা
- সামাজিক ব্যবসার ধারণাঃ
- গ্রামীণ শক্তি: নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প
- গ্রামীণ ড্যানোন: পুষ্টিকর দই উৎপাদন
- গ্রামীণ ফোন: ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রসার
- পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: নোবেল শান্তি পুরস্কার
- থ্রি জিরোর ধারণাঃ
- শূন্য দারিদ্র্য
- শূন্য বেকারত্ব
- শূন্য কার্বন নির্গমন
- আমাদের শেষ কথা
জন্ম, শৈশব ও শিক্ষাজীবন
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার হাথাজারী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন তার পরিবারের নবম সন্তান। তার পিতা হাজী দুলু মিয়া ছিলেন একজন স্বর্ণ ব্যবসায়ী এবং মা সাফিয়া খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। শৈশব থেকেই ইউনুস ছিলেন মেধাবী ও কৌতূহলী, যা তার ভবিষ্যতের সাফল্যের ভিত্তি তৈরি করেছিল।
আরো পড়ুনঃ
শিক্ষাজীবন
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা চট্টগ্রামের লামাবাজার নর্মাল স্কুল ও চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে সম্পন্ন করার পর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন। ১৯৬১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভ্যান্ডারবিল্ট ইউনিভার্সিটিতে যান এবং ১৯৬৯ সালে অর্থনীতিতে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন ও ক্ষুদ্রঋণের ধারণা: অধ্যাপনা ও মুক্তিযুদ্ধ
ডঃ ইউনুস বাংলাদেশে ফিরে এসে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি প্রবাসে অবস্থান করলেও বাংলাদেশের পক্ষে জনমত তৈরিতে ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধ শেষে তিনি দেশ গঠনের কাজে নিজেকে উৎসর্গ করেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের ধারণা ও প্রতিষ্ঠা
১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় তিনি দেখতে পান যে গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠী অল্প কিছু টাকার অভাবে অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যায়। তখন তিনি ৪২ জন নারীর মধ্যে মোট ৮৫৬ টাকা ঋণ বিতরণ করেন, যা তারা সফলভাবে পরিশোধ করেন। এখান থেকেই ক্ষুদ্রঋণের ধারণা আসে। ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়, যা দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে এক বিপ্লবী উদ্যোগ হয়ে ওঠে।
গ্রামীণ মডেল ও সামাজিক ব্যবসা: ক্ষুদ্রঋণের প্রভাব
গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণ পদ্ধতি বিশ্বব্যাপী একটি সফল মডেল হিসেবে গৃহীত হয়েছে। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। এই ব্যাংক ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে প্রায় ৯৭% নারী।
সামাজিক ব্যবসার ধারণা
ডঃ ইউনুস লাভের পরিবর্তে সামাজিক সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগের ওপর জোর দেন। তিনি "সোশ্যাল বিজনেস" ধারণার প্রচারক, যেখানে বিনিয়োগকৃত অর্থ পুনরায় সমাজের কল্যাণে ব্যবহৃত হয়। তার প্রতিষ্ঠিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক উদ্যোগ হলো:
গ্রামীণ শক্তি: নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস সামাজিক ধারণার একটি উপাদান হলো গ্রামীণ শক্তি নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্প গ্রামীণ শক্তি বাংলাদেশের একটি নেতৃস্থানীয় সামাজিক উদ্যোগ, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারে কাজ করে। ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংস্থাটি বিশেষ করে সৌরবিদ্যুৎ, বায়োগ্যাস এবং উন্নত চুলার মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
গ্রামীণ শক্তির নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পসমূহ: ১. সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প: গ্রামীণ শক্তি বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুতের প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিষ্ঠানটি সুলভ মূল্যে সোলার হোম সিস্টেম (SHS) সরবরাহ করে, যা বিদ্যুৎবিহীন গ্রামে আলো ও বিদ্যুতের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করে। ২০১৮ সালের মধ্যে ২০ লক্ষেরও বেশি সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা স্থাপন করেছে।
২. বায়োগ্যাস প্রকল্প: গবাদি পশুর গোবর ও কৃষিজাত বর্জ্য ব্যবহার করে রান্নার গ্যাস উৎপাদনের জন্য বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। এটি গ্রামীণ পরিবারগুলোর রান্নার খরচ কমায় এবং বন সংরক্ষণে সাহায্য করে। পাশাপাশি, উৎপন্ন জৈব সার কৃষিকাজে ব্যবহার করা হয়।
৩. উন্নত চুলা প্রকল্প: জ্বালানি দক্ষ উন্নত চুলা (Improved Cookstoves) সরবরাহ করে, যা সাধারণ চুলার তুলনায় ৫০% পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারে। এই চুলাগুলো কম ধোঁয়া উৎপন্ন করে, যা রান্নার সময় নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কমায়।
৪. সৌরশক্তি চালিত ক্ষুদ্র উদ্যোগ: সৌরশক্তিচালিত কৃষিপাম্প, মাইক্রোগ্রিড, সোলার মিনিগ্রিড ইত্যাদির মাধ্যমে কৃষি ও ব্যবসায়ে বিদ্যুৎ সুবিধা প্রদান।
উল্লেখযোগ্য প্রভাব, নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে কয়েক মিলিয়ন গ্রামীণ মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনেছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশকে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশ্বে একটি উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। গ্রামীণ শক্তি বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে এক বিপ্লব ঘটিয়েছে, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG) অর্জনেও সহায়ক।
গ্রামীণ ড্যানোন: পুষ্টিকর দই উৎপাদন
ড. মুহাম্মদ ইউনুস এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ড্যানোন (Grameen Danone) বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচন এবং পুষ্টি সমস্যার সমাধান করতে একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৬ সালে গ্রামীণ গ্রুপ এবং ফ্রান্সের বহুজাতিক কোম্পানি ড্যানোন যৌথভাবে গ্রামীণ ড্যানোন ফুডস লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল পুষ্টিকর এবং সাশ্রয়ী মূল্যের দই উৎপাদন ও বিতরণ করা।
গ্রামীণ ড্যানোনের পুষ্টিকর দই: শিখা : গ্রামীণ ড্যানোন "শিখা" নামে একটি বিশেষ পুষ্টিকর দই তৈরি করে, যা বিশেষ করে শিশুদের জন্য উপযোগী। এতে রয়েছে-- উচ্চ প্রোটিন, আয়রন ও ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, ডি, ও জিঙ্ক. এই দই বিশেষভাবে বাংলাদেশের অপুষ্টির শিকার শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি পূরণের জন্য তৈরি করা হয়েছে।
উদ্যোগের মূল বৈশিষ্ট্য: সামাজিক ব্যবসার মডেল: লাভ পুনরায় বিনিয়োগ করা হয়, বিনিয়োগকারীদের ব্যক্তিগত মুনাফা গ্রহণের সুযোগ নেই। গ্রামীণ সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততা: স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়, যা তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়তা করে। কম দামে পুষ্টিকর খাবার: দরিদ্র শিশুদের জন্য স্বল্পমূল্যে সহজলভ্য। পরিবেশবান্ধব উৎপাদন: স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থা।
গ্রামীণ ফোন: ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রসার
ড. মোহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ এবং সামাজিক ব্যবসার অগ্রদূত। যদিও তিনি মূলত গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য পরিচিত, তিনি গ্রামীণফোনের সাথেও জড়িত ছিলেন।
১৯৯৭ সালে গ্রামীণফোন চালু হয়, যা মূলত গ্রামীণ টেলিকম ও নরওয়েজিয়ান টেলিনর গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়েছিল। গ্রামীণ টেলিকম ছিল ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ট্রাস্টের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মোবাইল নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেওয়া এবং ডিজিটাল সংযোগ বৃদ্ধি করা।
ড. ইউনূসের "ভিলেজ ফোন প্রোগ্রাম" উদ্যোগটি ছিল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, যা গ্রামের নারীদের ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে মোবাইল ফোন কিনে তা ভাড়া দেওয়ার সুযোগ করে দেয়। এর ফলে— 1. গ্রামীণ জনগোষ্ঠী মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা পায়। 2. নারী উদ্যোক্তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়। 3. ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটে।
যদিও পরবর্তীতে গ্রামীণফোনের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আসে, তবে এটি দেশের বৃহত্তম মোবাইল অপারেটর হিসেবে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: নোবেল শান্তি পুরস্কার
২০০৬ সালে মুহাম্মদ ইউনুস ও গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা তৈরিতে তার অবদানের জন্য তিনি এই স্বীকৃতি পান।
অন্যান্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি
ডঃ ইউনুস প্রায় ৫০টি দেশের সর্বোচ্চ পুরস্কার ও ৬০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। তার উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা: প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম (যুক্তরাষ্ট্র), কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল (যুক্তরাষ্ট্র), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার,
বিতর্ক ও সমালোচনা: সরকারি ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ
বাংলাদেশ সরকার ও কিছু মহল থেকে তার কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা এসেছে, বিশেষ করে গ্রামীণ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ও ঋণের সুদের হার নিয়ে। সরকার ২০১১ সালে তাকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে সরিয়ে দেয়।
সমালোচনার জবাব
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস বরাবরই দাবি করেছেন যে তার উদ্যোগের মূল লক্ষ্য দারিদ্র্য বিমোচন, এবং তার ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি দরিদ্রদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করেছে। অনেক গবেষণা তার পদ্ধতির ইতিবাচক দিক তুলে ধরেছে।
মুহাম্মদ ইউনুসের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব: বিশ্বব্যাপী গ্রামীণ মডেলের গ্রহণযোগ্যতা আজ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি চলছে, যা ইউনুসের মডেল অনুসরণ করে তৈরি হয়েছে।
ভবিষ্যৎ ভাবনা: তিনি সবসময়ই নতুন নতুন সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগ চালু করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তন ও দারিদ্র্য নিরসনের জন্য।
থ্রি জিরোর ধারণা :
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস থ্রি জিরো বা তিন শূন্যের ধারনা দিয়েছেন এই তত্ত্ব তিনটি মূল নীতির ওপর ভিত্তি করে গঠিত:
১। শূন্য দারিদ্র্য (Zero Poverty)
ড. মুহাম্মদ ইউনুস তাঁর শূন্য দারিদ্রতা (Zero Poverty) তত্ত্বের মাধ্যমে বিশ্ব থেকে চরম দারিদ্র্য নির্মূলের ধারণা উপস্থাপন করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে দারিদ্র্য কোনো স্বাভাবিক বা অবশ্যম্ভাবী অবস্থা নয়; বরং এটি একটি মানবসৃষ্ট সমস্যা এবং সঠিক উদ্যোগ ও নীতিমালার মাধ্যমে এটি সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব।
শূন্য দারিদ্রতা তত্ত্বের মূল ধারণা: দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব: ১। দারিদ্র্যকে মানবসৃষ্ট সমস্যা হিসেবে দেখা হয় এবং এটি দূরীকরণযোগ্য। যদি সঠিক আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা তৈরি করা যায়, তবে বিশ্বকে দারিদ্র্যমুক্ত করা সম্ভব।
২। সামাজিক ব্যবসা ও ক্ষুদ্রঋণ: দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য অর্থনীতির প্রচলিত কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন। ক্ষুদ্রঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা সম্ভব। দারিদ্র্যের মূল কারণ হলো অর্থনৈতিক সুযোগের অভাব, যা ক্ষুদ্রঋণ ও উদ্যোক্তা তৈরি করে দূর করা যায়।
৩। শূন্য দারিদ্র্যের লক্ষ্যমাত্রা: এক সময়ের মতো দাসপ্রথা বা বর্ণবাদ সমাজে অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে, তেমনই দারিদ্র্যকেও সমাজ থেকে বিলুপ্ত করা সম্ভব। সরকার, বেসরকারি খাত এবং নাগরিক সমাজ একসঙ্গে কাজ করলে এটি অর্জন করা সম্ভব হবে।
প্রভাব ও গ্রহণযোগ্যতা:
ড. ইউনুসের এই তত্ত্ব বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়েছে এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা দারিদ্র্য দূরীকরণের কৌশল নির্ধারণে এটি বিবেচনা করেছে। তার ক্ষুদ্রঋণ মডেল অনেক দেশে গৃহীত হয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটিয়েছে।
এই তত্ত্বের মূল কথা হলো, দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব, যদি সঠিক কৌশল ও নীতিমালা গ্রহণ করা হয়।
২। শূন্য বেকারত্ব (Zero Unemployment)
ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূসের "শূন্য বেকারত্ব তত্ত্ব" (Zero Unemployment Theory) মূলত একটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক ধারণা, যেখানে তিনি দেখান কিভাবে সমাজে কর্মসংস্থানের অভাব দূর করা সম্ভব। এই তত্ত্বের মূল ভিত্তি হলো—সঠিক পরিকল্পনা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণ সুবিধা, দক্ষতা উন্নয়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা তৈরি করা। তত্ত্বের মূল উপাদানসমূহ:
১। উদ্যোক্তা তৈরির গুরুত্ব: মানুষকে চাকরির সন্ধানী না করে চাকরি সৃষ্টিকারী বানানো। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা তৈরিতে সহায়তা দেওয়া।
২। ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবস্থা: দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে স্বনির্ভর করা। গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ বাড়ানো।
৩। দক্ষতা উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ: কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা।আধুনিক প্রযুক্তি ও বাজার উপযোগী প্রশিক্ষণ দেওয়া।
৪। সামাজিক ব্যবসা (Social Business): মুনাফাভিত্তিক নয়, বরং সমাজের কল্যাণে উদ্যোগ নেওয়া।দারিদ্র্য ও বেকারত্ব দূর করতে ব্যবসাকে সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে দেখা।
৫। অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি: সবাইকে উৎপাদন ব্যবস্থায় যুক্ত করা। নারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও যুবকদের জন্য বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করা।
প্রভাব ও কার্যকারিতা: যদি সঠিকভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে একটি সমাজে "শূন্য বেকারত্ব" বা সম্পূর্ণ কর্মসংস্থান সম্ভব। এই তত্ত্বের ভিত্তিতে অনেক দেশেই ক্ষুদ্র ঋণ এবং সামাজিক ব্যবসার মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে। এই তত্ত্ব মূলত অর্থনৈতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচারকে কেন্দ্র করে গঠিত, যেখানে সমাজের প্রতিটি সদস্যকে কর্মক্ষম করে তোলা হয়।
আরো পড়ুনঃ
৩। শূন্য কার্বন নির্গমন (Zero Net Carbon Emission)
ড. মুহাম্মদ ইউনুস "শূন্য কার্বন নির্গমন" (Zero Carbon Emission) ধারণাটি তার সামাজিক ব্যবসা ও টেকসই উন্নয়নের দর্শনের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য ব্যবসা, প্রযুক্তি এবং সামাজিক উদ্যোগকে একত্রিত করতে হবে।
তার মূল দর্শন:১। তরুণ উদ্যোক্তাদের সম্পৃক্ততা: তিনি নতুন প্রজন্মকে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে সম্পৃক্ত করতে চান।
২। সামাজিক ব্যবসার ভূমিকা: মুনাফার পরিবর্তে সামাজিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়ে নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব উদ্যোগের প্রসার ঘটানো।
বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস
৩। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা: ১০০% নবায়নযোগ্য শক্তিতে নির্ভরশীল অর্থনীতি গড়ে তোলা।
৪। গ্রামীণ বিদ্যুৎ ও নবায়নযোগ্য শক্তি: তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ শক্তি (Grameen Shakti) সোলার প্যানেল ও নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে।
৫। নতুন শিল্প ও প্রযুক্তি: তিনি "Three Zero Club" ধারণা দিয়েছেন—যার মধ্যে Zero Carbon Emission, Zero Unemployment, এবং Zero Poverty অন্তর্ভুক্ত।
ড. ইউনুসের মতে, জলবায়ু সংকট সমাধানের জন্য বড় কর্পোরেশন ও সরকারকে পরিবেশবান্ধব নীতিতে যেতে হবে এবং তরুণ উদ্যোক্তাদের শূন্য কার্বন নির্গমনের লক্ষ্যে নতুন প্রযুক্তি ও উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহিত করা দরকার।
আমাদের শেষ কথা
ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস একজন অর্থনীতিবিদ, সমাজসংস্কারক ও উদ্যোক্তা, যিনি বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য বিমোচনের এক নতুন পথ দেখিয়েছেন। তার ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক ব্যবসার ধারণা অনেক দেশের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রেখেছে। ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস সম্বন্ধে আপনাদের সামনে বিস্তারিত আলোচনা করেছি তার সমন্ধে আরো জানতে হলে আমাদের এই কন্টেন্ট সম্পূর্ণ অধ্যায়ন করুন তাহলে আরো বিস্তারিত জানতে পারবেন
বিতর্ক থাকলেও, তার অবদান অনস্বীকার্য। তার কাজ ভবিষ্যতেও দারিদ্র্য দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকলে আপনারা নিত্যনতুন আর্টিকেল সম্বন্ধে জানতে পারবেন এবং নতুন নতুন তথ্য সম্বন্ধে অবহিত হতে পারবেন
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url