বুক ধড়ফর কেন করে এবং প্রতিকার কি

 বুক ধড়ফর কেন করে  এবং প্রতিকার কি




বুক ধড়ফর বা হার্টবিট বেড়ে যাওয়া একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এটি কখনো স্বাভাবিক হতে পারে, আবার কখনো গুরুতর কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণও হতে পারে।

 অনেক সময় উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, কফি বা অ্যালকোহল সেবন, উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগের কারণে বুক ধড়ফর করতে পারে। তাই এটির কারণ বোঝা এবং যথাযথ প্রতিকার নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পোস্ট সূচিপত্র: বুক ধড়ফর কেন করে এবং প্রতিকার কি 
বুক ধড়ফর কি কি ধরনের রোগ 
বুক ধড়ফর করার কারণ 
বুক ধড়ফর করা মানেই কি  হৃদরোগ
বুকের ভেতর অস্থির লাগে কেন 
একই সাথে মাথা ব্যাথা ও বুক ধরফর করার কারণ
 বুক ধড়ফর করলে কী করবেন
বুক ধড়ফর প্রতিরোধের উপায়
লেখকের শেষ মন্তব্য 

 বুক ধড়ফর কি ধরনের রোগ 

বুক ধড়ফর বা হৃদকম্পন (Palpitations) সাধারণত হার্টবিট অনিয়মিত বা দ্রুত বেগে অনুভূত হওয়ার একটি অবস্থা। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে কিছু সাধারণ এবং কিছু গুরুতর কারণ রয়েছে।

বুক ধড়ফর করার কারণ

বুক ধড়ফর করার বিভিন্ন কারণ আছে। সাধারণত, এটি দুই ধরনের হতে পারে—শারীরিক ও মানসিক। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলোঃ

১. শারীরিক কারণ

ক) হৃদযন্ত্রের সমস্যাঃ  হৃদযন্ত্রের যেকোনো অসুস্থতা বুক ধড়ফর করার অন্যতম কারণ হতে পারে। যেমনঃ হার্ট অ্যারিথমিয়া: হৃদস্পন্দনের অনিয়মিত গতি। হৃদরোগ বা ব্লকেজ: করোনারি ধমনীতে ব্লক হলে হৃদপিণ্ড ঠিকমতো রক্ত পায় না, এতে বুক ধরফর করতে পারে। মাইট্রাল ভালভ প্রোল্যাপস: হৃদযন্ত্রের ভালভের সমস্যার কারণে বুক ধড়ফর হতে পারে।

খ) উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপঃ রক্তচাপ বেড়ে গেলে বা কমে গেলে হৃৎপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হতে পারে, যা বুক ধরফরের কারণ হতে পারে।

আরো পড়ুনঃ

গ) অ্যানিমিয়া (রক্তশূন্যতা)ঃ রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাব হলে হৃদপিণ্ড দ্রুত রক্ত সরবরাহের চেষ্টা করে, যা বুক ধড়ফর করার কারণ হতে পারে।

ঘ) থাইরয়েডের সমস্যাঃ  হাইপারথাইরয়েডিজম হলে শরীরে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন নিঃসৃত হয়, যা হৃদযন্ত্রকে দ্রুত স্পন্দিত করে।

ঙ) শরীরে পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইট ভারসাম্যহীনতাঃ  শরীরে সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে বুক ধরফর করতে পারে।

চ) ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল গ্রহণঃ অতিরিক্ত কফি বা অ্যালকোহল সেবন করলে স্নায়ুতন্ত্র উত্তেজিত হয়, যা বুক ধরফরের কারণ হতে পারে।

ছ) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ কিছু ওষুধ, যেমন ঠান্ডার ওষুধ, ইনহেলার, হাই ব্লাড প্রেশারের ওষুধ বা ডিপ্রেশনের ওষুধ বুক ধরফর করাতে পারে।

২. মানসিক কারণ

ক) উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাঃ দুশ্চিন্তা বা অতিরিক্ত টেনশন হৃদস্পন্দন দ্রুত করে দিতে পারে, যা বুক ধরফর হিসেবে অনুভূত হয়।

খ) আতঙ্ক বা প্যানিক অ্যাটাকঃ হঠাৎ করে প্রচণ্ড ভয় বা উদ্বেগ তৈরি হলে বুক ধরফর করতে পারে। এর সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, ঘাম ও মাথা ঘোরা থাকতে পারে।

গ) অতিরিক্ত মানসিক চাপঃ পরীক্ষার চাপ, অফিসের কাজের চাপ বা ব্যক্তিগত জীবনের কোনো সমস্যা বুক ধরফর করার কারণ হতে পারে।

বুক ধড়ফর করা মানেই কি হৃদরোগ 

বুক ধড়ফর করা বা হৃদকম্পন অনুভব করা সবসময় হৃদরোগের লক্ষণ নয়। এটি বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যেমনঃ  স্বাভাবিক কারণঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা, ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল গ্রহণ,  পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ।

২. শারীরিক কারণ: উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ, শরীরে পানিশূন্যতা (ডিহাইড্রেশন), রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যাওয়া, 

৩. হৃদরোগ সংক্রান্ত কারণঃ অনিয়মিত হৃদস্পন্দন (Arrhythmia), করোনারি আর্টারি ডিজিজ (হৃদযন্ত্রের রক্তনালী ব্লক হয়ে যাওয়া), হার্ট ফেইলিওর বা ভাল্বের সমস্যা, যদি বুক ধড়ফর করা বারবার হয়, দীর্ঘসময় স্থায়ী থাকে বা এর সঙ্গে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা অথবা অজ্ঞান হওয়ার মতো উপসর্গ থাকে, তবে দেরি না করে একজন ডাক্তার দেখানো উচিত।

বুকের ভেতর অস্থির লাগে কেন

বুকের ভিতর অস্থির লাগার অনেক কারণ থাকতে পারে, যা শারীরিক বা মানসিক উভয় দিক থেকেই হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলোঃ  দুশ্চিন্তা ও স্ট্রেস – অতিরিক্ত চিন্তা, মানসিক চাপ বা উদ্বেগের কারণে বুক ধড়ফর করতে পারে।  প্যানিক অ্যাটাক – হঠাৎ করে খুব ভয় পাওয়া, শ্বাসকষ্ট লাগা বা হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার অনুভূতি হতে পারে। ডিপ্রেশন (বিষণ্ণতা), মন খারাপ, হতাশা বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণে অস্থির লাগতে পারে। ক্যাফেইন বা নিকোটিন গ্রহণ, অতিরিক্ত চা, কফি, ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে উদ্বেগ ও অস্থিরতা বাড়তে পারে।

হৃদরোগজনিত সমস্যা – যেমন উচ্চ রক্তচাপ, অ্যারিথমিয়া (হৃদস্পন্দনের অনিয়মিততা) বা এনজাইনা (হৃদযন্ত্রের রক্তপ্রবাহের সমস্যা)। গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি – অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের কারণে বুক ভারী লাগতে পারে, যা অনেক সময় অস্থিরতার অনুভূতি তৈরি করে। হরমোনের সমস্যা – থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে বুক ধড়ফর বা উদ্বেগ হতে পারে।

শরীরে পানিশূন্যতা বা রক্তে শর্করার ঘাটতি – শরীরে পানি বা গ্লুকোজের অভাব থাকলে দুর্বলতা, মাথা ঘোরা ও বুক ধড়ফর লাগতে পারে। দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন।

নিয়মিত খাবার খান এবং পর্যাপ্ত পানি পান করুন। ক্যাফেইন ও ধূমপান কমান। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন। যদি সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা শারীরিক অসুবিধা হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

একই সাথে মাথা ব্যথা ও বুক ধড়ফর  করার কারণ 

মাথা ব্যথা ও বুক ধড়ফর করার (হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন) কারণ বিভিন্ন হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো: চাপ ও উদ্বেগ (Stress & Anxiety), অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, দেহের কর্টিসল ও অ্যাড্রেনালিন হরমোন বাড়িয়ে দেয়, যা মাথাব্যথা ও বুক ধড়ফর করার কারণ হতে পারে। 

   উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure),  রক্তচাপ বেড়ে গেলে মাথা ব্যথা ও হৃদস্পন্দন দ্রুত হতে পারে।. রক্তে শর্করার সমস্যা (Low/High Blood Sugar), নিম্ন রক্তশর্করা (Hypoglycemia) মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, বুক ধড়ফর করা ও মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। উচ্চ রক্তশর্করাও মাঝে মাঝে একই রকম উপসর্গ সৃষ্টি করতে পারে।  ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা, শরীরে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে মাথা ব্যথা ও হৃদস্পন্দনের হার বেড়ে যেতে পারে।  ক্যাফেইন বা নিকোটিন গ্রহণ বেশি হলে, অতিরিক্ত চা, কফি, ধূমপান বা অ্যালকোহল গ্রহণ করলে বুক ধড়ফর করা ও মাথাব্যথা হতে পারে।

 হার্টের সমস্যা (Heart Issues),  হার্টের অনিয়মিত স্পন্দন (Arrhythmia) বা অন্য কোনো সমস্যা থাকলে বুক ধড়ফর করার পাশাপাশি মাথা ব্যথা অনুভূত হতে পারে।. অ্যানিমিয়া (শরীরে রক্তস্বল্পতা), পর্যাপ্ত অক্সিজেন সঞ্চালন না হলে মাথাব্যথা ও বুক ধরফর করা হতে পারে। 

   থাইরয়েডের সমস্যাঃ হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোন বেশি উৎপন্ন হলে) হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয় এবং মাথা ব্যথার কারণ হতে পারে।

 প্রচুর পানি পান করুন,  গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন ও রিল্যাক্স করার চেষ্টা করুন,  ক্যাফেইন, অ্যালকোহল, ধূমপান কমান।  বেশি সময় ধরে সমস্যা থাকলে বা বুকে ব্যথা অনুভূত হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

বুক ধড়ফর করার লক্ষণ

যখন বুক ধড়ফর করে, তখন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক অনুভূতি দেখা দিতে পারে, যেমন: হৃদস্পন্দন খুব জোরে অনুভূত হওয়া, বুক ধড়ফর করা বা বুক কাঁপছে মনে হওয়া,  শ্বাসকষ্ট অনুভব করা, মাথা ঝিমঝিম করা বা ঘোর লাগা, দুর্বল লাগা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অনুভূতি। যদি বুক ধড়ফরের সঙ্গে বুকে ব্যথা, শ্বাসকষ্ট বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়, তবে এটি জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

বুক ধড়ফর করলে কী করবেন

বুক ধড়ফর করলে কিছু ঘরোয়া উপায় এবং জীবনধারায় পরিবর্তন এনে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

১. তাৎক্ষণিক করণীয়ঃ  শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করুন: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ছাড়ুন। পানির অভাব পূরণ করুন: ঠান্ডা পানি পান করুন। চোখ বন্ধ করে রিল্যাক্স করুন: কয়েক মিনিট চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। ভ্যাসালভা ম্যানুভার করুন: নাক চেপে রেখে মুখ বন্ধ রেখে হালকা চাপ দিন, এটি হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।

২. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনঃ ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (কফি, চা, কোলা) কমান। অ্যালকোহল এবং ধূমপান পরিহার করুন। ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান (কলার মতো ফল, পালং শাক, বাদাম)।পর্যাপ্ত পানি পান করুন।

৩. মানসিক চাপ কমানোঃ মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করুন। পর্যাপ্ত ঘুমান (৬-৮ ঘণ্টা)। দৈনিক ব্যায়াম করুন (হালকা হাঁটা, যোগব্যায়াম ইত্যাদি)।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াঃ  যদি বুক ধড়ফর দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্যান্য উপসর্গের সঙ্গে হয়, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার ইসিজি, ইকোকার্ডিওগ্রাফি বা ব্লাড টেস্ট করতে পারেন।

বুক ধড়ফর প্রতিরোধের উপায়

১। নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ বুক ধড়ফড়ানো (প্যালপিটেশন) সাধারণত দুশ্চিন্তা, ক্যাফেইন গ্রহণ, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ বা অনিয়মিত হার্টবিটের কারণে হতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম করলে হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে এবং বুক ধড়ফরানোর সমস্যা কমতে পারে। তবে, যদি এটি বারবার ঘটে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ ধড়ফর নেওয়া উচিত।

(ক) ধড়ফরানো কমানোর জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম: ১. ডিপ ব্রিদিং ও প্রানায়াম: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং ধীরে ধীরে ছাড়ুন। অনুলোম-বিলোম, ব্রামরি, উদ্গীত প্রানায়াম করলে স্নায়ু শান্ত হয়।

২. হালকা কার্ডিও ব্যায়াম: ব্রিস্ক ওয়াকিং (দ্রুত হাঁটা), সাইক্লিং, জগিং, সাঁতার,

৩. যোগ ব্যায়াম: বজ্রাসন,তাড়াসন, শবাসন, ভুজঙ্গাসন

৪. স্ট্রেচিং ব্যায়াম: ktশরীর নমনীয় রাখতে নিয়মিত স্ট্রেচিং করলে রক্তসঞ্চালন ভালো হয়, যা হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখে।

সতর্কতা: ব্যায়াম করার সময় বুক ধড়ফর বা শ্বাসকষ্ট হলে ব্যায়াম বন্ধ করে বিশ্রাম নিন। অতিরিক্ত ক্যাফেইন, অ্যালকোহল বা ধূমপান এড়িয়ে চলুন। পানি পান ও সুষম খাদ্য গ্রহণ নিশ্চিত করুন। যদি বুক ধড়ফরানো দীর্ঘদিন চলতে থাকে, তবে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

২। ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুনঃ ক্যাফেইন, নিকোটিন, এবং অ্যালকোহল পরিহার করা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হতে পারে। এগুলো ছাড়ার কিছু প্রধান কারণ এবং উপকারিতা হলো—

ক্যাফেইন পরিহার: উপকারিতা:অনিদ্রা কমাতে সাহায্য করে, উদ্বেগ ও হৃদস্পন্দনের হার কমায়, হজমের সমস্যা দূর করতে সহায়ক, প্রাকৃতিক শক্তি বৃদ্ধি করে, 

নিকোটিন পরিহার: উপকারিতা:ফুসফুস ও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে, ত্বক ভালো থাকে, বয়সজনিত লক্ষণ কম দেখা যায় মানসিক চাপ ও আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অ্যালকোহল পরিহার : উপকারিতা:লিভার, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে । ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ হয় ঘুমের গুণগত মান ভালো হয়। 

আপনি যদি এগুলো পরিহার করতে চান, তাহলে ধীরে ধীরে কমিয়ে আনুন এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলুন। 

৩। পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুনঃ পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভালো ঘুম নিশ্চিত করতে কিছু কার্যকর উপায় হলোঃ

১. নিয়মিত ঘুমের রুটিন বজায় রাখাঃ প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক ঠিক রাখতে সাহায্য করে।

২. আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করাঃ শোবার ঘর অন্ধকার, ঠাণ্ডা ও নিরিবিলি রাখুন। আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করুন। ফোন, ল্যাপটপ বা টিভির আলো থেকে দূরে থাকুন।

৩. ঘুমের আগে আরামদায়ক অভ্যাস গড়ে তোলাঃ  ধীরে ধীরে আলো কমিয়ে আনুন। বই পড়া, মেডিটেশন বা নরম মিউজিক শুনতে পারেন। ক্যাফেইন ও ভারী খাবার এড়িয়ে চলুন।

৪. শরীরচর্চা করুন, তবে ঘুমের ঠিক আগে নয়ঃ  দিনের বেলা শরীরচর্চা করলে ঘুমের মান ভালো হয়, কিন্তু শোবার আগে ভারী ব্যায়াম ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।

৫. চিন্তা ও দুশ্চিন্তা কমানোঃ  অতিরিক্ত স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা ঘুমের সমস্যা তৈরি করতে পারে। প্রয়োজনে ডায়েরি লেখা বা রিলাক্সেশন টেকনিক প্রয়োগ করতে পারেন। এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে পর্যাপ্ত ও গুণগত মানের ঘুম নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

৪। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুনঃ বুক ধড়ফর (হৃদকম্পন বা পালপিটেশন) হলে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিছু খাবার হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, আবার কিছু খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যে সব খাবার খাবেন:


 পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার – কলা, কমলা, পালং শাক, মিষ্টি আলু, ডাবের পানি ইত্যাদি ।ম্যাগনেসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার – কাজুবাদাম, সূর্যমুখীর বীজ, শাকসবজি, ডাল  ইত্যাদি । ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড – সামুদ্রিক মাছ (স্যামন, টুনা), চিয়া সিড, আখরোট ইত্যাদি। অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার,  ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি, ডার্ক চকলেট, সবুজ চা ইত্যাদি ।  ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার – ওটস, বাদাম, শাকসবজি, গোটা শস্য ইত্যাদি । প্রচুর পানি পান করুন – শরীর হাইড্রেটেড রাখা জরুরি ।

যে সব খাবার  এড়িয়ে চলবেনঃ. অতিরিক্ত ক্যাফেইন – চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক ইত্যাদি । অতিরিক্ত লবণ ও প্রক্রিয়াজাত খাবার – ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার ইত্যাদি ।  অ্যালকোহল ও ধূমপান – এগুলো হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। চিনি ও উচ্চ গ্লাইসেমিক খাবার – সফট ড্রিংক, মিষ্টি খাবার ইত্যাদি । ট্রান্স ফ্যাটসমৃদ্ধ খাবার – ভাজা-পোড়া খাবার, মার্জারিন ।

অতিরিক্ত টিপসঃ  নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন, পর্যাপ্ত ঘুমান (৭-৮ ঘণ্টা), মানসিক চাপ কমানোর জন্য মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করতে পারেন । 

আপনার বুক ধড়ফর যদি বারবার হয় বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার সঙ্গে হয়, তাহলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

মেডিটেশন বা রিলাক্সেশন থেরাপি অনুসরণ করুনঃ  বুক ধড়ফর বা অস্থিরতা (প্যালপিটেশন) কমানোর জন্য মেডিটেশন ও রিলাক্সেশন থেরাপি বেশ কার্যকর হতে পারে। নিচে কিছু সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো ঃ  গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস (Deep Breathing Exercises)ঃ ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন (৪ সেকেন্ড), শ্বাস ধরে রাখুন (৪ সেকেন্ড),  মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন (৬ সেকেন্ড),  এভাবে ৫-১০ মিনিট করুন । মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন ঃ  চোখ বন্ধ করে আরামদায়ক ভঙ্গিতে বসুন, শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন । যদি মন অন্যদিকে চলে যায়, আবার শ্বাস-প্রশ্বাসে ফিরে আসুন । প্রোগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন (PMR)ঃ শরীরের প্রতিটি অংশ একে একে টাইট করুন, তারপর ধীরে ধীরে ছেড়ে দিন । পায়ের আঙুল থেকে মাথা পর্যন্ত এটি করুন।

আরো পড়ুনঃ

গাইডেড ইমেজারি (Guided Imagery) ঃ নিজের পছন্দের শান্তিপূর্ণ কোনো স্থান কল্পনা করুন (যেমন, সমুদ্রের ধারে),  মনে মনে সেই স্থানের পরিবেশ অনুভব করুন ।  যোগব্যায়াম (Yoga) এবং মেডিটেটিভ স্ট্রেচিংঃ  সহজ কিছু যোগাসন ও স্ট্রেচিং করুন, শবাসন বা ধ্যানাসন করে মনকে প্রশান্ত করুন ।

এছাড়া, পর্যাপ্ত ঘুম, ক্যাফেইন কমানো এবং দৈনিক ব্যায়াম বুক ধড়ফর কমাতে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি খুব বেশি অস্থিরতা বা বুক ধড়ফর অনুভব করেন, তাহলে অবশ্যই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। উচ্চ রক্তচাপ ও থাইরয়েড সমস্যার নিয়মিত চিকিৎসা নিন।

লেখকের  শেষ মন্তব্য

বুক ধড়ফর করা কখনো স্বাভাবিক হতে পারে, আবার কখনো এটি গুরুতর কোনো শারীরিক সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি এটি বারবার হয়, দীর্ঘস্থায়ী হয় বা অন্য কোনো গুরুতর উপসর্গের সঙ্গে ঘটে, তবে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। 

সঠিক জীবনযাপন, খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বুক ধড়ফর সমস্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। এতক্ষন আমরা বুক ধড়ফর এর কারণ ও প্রতিকার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আমাদের এই আলোচনা থেকে আপনি অনেক উপকৃত হবেন। আরও নিত্য নতুন বিষয়ে জানতে চাইলে আমাদের এই ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন  এবং নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url