আপনি ব্রকলি সম্বন্ধে কিছু জানেন কি
আপনি ব্রকলি সম্বন্ধে কিছু জানেন কি
ব্রকলি হলো একটি পুষ্টিকর সবজি যা স্বাস্থ্যসচেতন ব্যক্তিদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। এটি মূলত ক্রুসিফেরাস গোত্রের সবজির অন্তর্ভুক্ত এবং দেখতে ফুলকপির মতো হলেও পুষ্টিগুণের দিক থেকে এটি আরও উন্নত। ব্রকলি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সুপারফুড হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
এই প্রবন্ধে আমরা ব্রকলির ইতিহাস, পুষ্টিগুণ, স্বাস্থ্য উপকারিতা, চাষাবাদ পদ্ধতি, রান্নার পদ্ধতি এবং এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। ব্রকলি সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই নিবন্ধটি সম্পূর্ণ ভিজিট করুন এবং অনেক বিষয়ে জানতে পারবেন
ব্রকলি কি ধরনের সবজি
ব্রকলি (Broccoli) হলো এক ধরনের শীতকালীন সবজি, যা ক্রুসিফেরাস (Cruciferous) বা ব্রাসিকাসি (Brassicaceae) পরিবারের সদস্য। এটি মূলত ফুলকপির মতো একটি সবজি, যার সবুজ ফুলের অংশ ও কান্ড খাওয়া হয়। ব্রকলি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ, এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন C, ভিটামিন K, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফোলেট রয়েছে। এটি সাধারণত সালাদ, স্টির-ফ্রাই, স্যুপ বা ভাপে সিদ্ধ করে খাওয়া হয় এবং এটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
ব্রকলির ইতিহাস ও উৎপত্তি
ব্রকলির উৎপত্তি প্রায় ২০০০ বছর আগে ইতালিতে হয়েছিল। এটি ব্রাসিকা ওলেরাসিয়া (Brassica oleracea) গোত্রের একটি অংশ, যেখানে বাঁধাকপি, ফুলকপি এবং ব্রাসেলস স্প্রাউটসও অন্তর্ভুক্ত। রোমান সভ্যতায় এটি বেশ জনপ্রিয় ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ইউরোপের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।১৯২০-এর দশকে ব্রকলি প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় হতে শুরু করে। বর্তমানে এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়, বিশেষ করে চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইতালিতে।
আরো পড়ুনঃ
ব্রকলির যত পুষ্টিগুণ
ব্রকলি পুষ্টিগুণের এক অনন্য ভাণ্ডার। ১০০ গ্রাম কাঁচা ব্রকলিতে যা থাকে তা নিচে দেওয়া হলো: ক্যালরি: ৩৪, প্রোটিন: ২.৮ গ্রাম, শর্করা: ৬.৬ গ্রাম, ফাইবার: ২.৬ গ্রাম, ভিটামিন সি: দৈনিক প্রয়োজনের প্রায় ১৪৯%, ভিটামিন কে: দৈনিক প্রয়োজনের ১০২%, ভিটামিন এ, বি৬, ফোলেট, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ও আয়রন. ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
ব্রকলির স্বাস্থ্য উপকারিতা
ব্রকলির পুষ্টিগুণের কারণে এটি আমাদের শরীরের বিভিন্ন উপকার করে। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
১. ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ ব্রকলিতে সালফোরাফেন (Sulforaphane) নামে একটি বিশেষ যৌগ রয়েছে, যা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি দেহের ক্ষতিকর কোষ ধ্বংস করতে এবং টিউমার বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
২. হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো ঃ ব্রকলি খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এতে থাকা ফাইবার, পটাসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য রক্ষা করে।
৩. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়ঃ ব্রকলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এটি ঠান্ডা-জ্বর প্রতিরোধেও সহায়ক।
৪. হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ভিটামিন কে, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় ব্রকলি হাড়ের গঠনে সাহায্য করে এবং অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৫. হজমশক্তি উন্নত করেঃ ব্রকলিতে থাকা ফাইবার পরিপাকতন্ত্রের জন্য উপকারী। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৬. চোখের জন্য উপকারী ঃ ব্রকলিতে লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন নামক উপাদান রয়েছে, যা চোখের সুস্থতা বজায় রাখে এবং বয়সজনিত ছানি পড়ার ঝুঁকি কমায়।
৭. ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ ব্রকলি রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে কার্যকরী।
ব্রকলি খাওয়ার নিয়ম
ব্রকলি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কঠোর নিয়ম নেই, তবে এর পুষ্টিগুণ সর্বাধিক উপকারে আসার জন্য কিছু ভালো উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে:
১. কাঁচা খাওয়া: ব্রকলি কাঁচা খাওয়া যায়, যেমন সালাডে ব্যবহার করা যায়। তবে বেশি পুষ্টি গ্রহণের জন্য হালকা সিদ্ধ বা ভাপ দেওয়া ভালো।
২. ভাপে রান্না করা: ব্রকলি বেশি সময় ধরে রান্না করলে এর পুষ্টিগুণ নষ্ট হতে পারে। ৩-৫ মিনিটের জন্য হালকা ভাপে সেদ্ধ করলে এর ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অক্ষত থাকে।
৩. হালকা ভাজা বা স্টির-ফ্রাই: সামান্য অলিভ অয়েল বা নারকেল তেলে হালকা ভেজে নিতে পারেন। রসুন, আদা, গোলমরিচ ও লবণ যোগ করলে স্বাদ বাড়বে।
৪. ব্রকলির স্যুপ: ব্রকলি দিয়ে স্যুপ তৈরি করা যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্যান্য শাকসবজি ও মসলা যোগ করে পুষ্টিকর স্যুপ বানানো যায়।
৫. স্মুদি বা জুস: ব্রকলি, কলা, আপেল ও পালং শাক মিশিয়ে স্বাস্থ্যকর স্মুদি তৈরি করা যায়।
ব্রকলি খাওয়ার কিছু সতর্কতা: কাঁচা ব্রকলি বেশি খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। যারা থাইরয়েডের সমস্যায় ভুগছেন, তারা অতিরিক্ত ব্রকলি এড়িয়ে চলতে পারেন। কিডনি রোগীরা ব্রকলি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ব্রকলি নিয়মিত পরিমাণ মতো খেলে এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী।
ব্রকলির দাম কত
ঢাকার বাজারে ব্রকলির দাম বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হতে পারে এবং এটি নির্ভর করে মৌসুম, সরবরাহ ও চাহিদার উপর। সাধারণত, শীতকালে ব্রকলির সরবরাহ বেশি থাকায় দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকে। বর্তমানে, মার্চ মাসে, ব্রকলির সরবরাহ কমে আসতে পারে, যা দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। সাধারণত, ঢাকার বাজারে ব্রকলির দাম প্রতি কেজি ৮০ টাকা থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে হতে পারে। তবে, সুনির্দিষ্ট ও সর্বশেষ দাম জানতে, স্থানীয় বাজারে খোঁজ নেওয়া উত্তম।
ব্রকলির রেসিপি
ব্রকলি দিয়ে অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা যায়। এখানে কয়েকটি সহজ ও মজাদার রেসিপি দেওয়া হলোঃ ১. গার্লিক বাটার সautéed ব্রকলিঃ উপকরণ: ২ কাপ ব্রকলি (ছোট টুকরো করা), ২ চামচ মাখন ৩-৪ কোয়া রসুন (কুচি করা, লবণ ও গোলমরিচ স্বাদমতো, আধা চা চামচ লেবুর রস ।
প্রস্তুত প্রণালী:
১. ব্রকলি ধুয়ে ২-৩ মিনিট গরম পানিতে ফুটিয়ে নরম করে নিন। একটি প্যানে মাখন গরম করে তাতে রসুন দিন এবং হালকা বাদামি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন। ব্রকলি দিয়ে ৩-৪ মিনিট ভাজতে থাকুন। লবণ ও গোলমরিচ দিন। নামানোর আগে লেবুর রস ছড়িয়ে দিন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
২. ব্রকলি ও চিকেন স্টার-ফ্রাইঃ উপকরণ: ১ কাপ ব্রকলি, ১ কাপ চিকেন (ছোট টুকরো), ১ চামচ সয়া সস, ১ চামচ ভিনেগার, ১ চামচ তেল, ১ চামচ রসুন কুচি, ১ চামচ গোলমরিচ গুঁড়া , আধা চামচ চিনি
প্রস্তুত প্রণালী: চিকেন সামান্য লবণ ও গোলমরিচ দিয়ে মেরিনেট করে রাখুন। তেল গরম করে রসুন দিয়ে ভাজুন, তারপর চিকেন দিন এবং ভালোভাবে রান্না করুন। চিকেন সেদ্ধ হলে ব্রকলি দিন এবং ৩-৪ মিনিট নেড়ে ভাজুন। সয়া সস, ভিনেগার, ও চিনি মিশিয়ে আরও ২ মিনিট ভাজুন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
৩. ব্রকলি স্যুপঃ উপকরণ: ঃ ২ কাপ ব্রকলি, ১টি পেঁয়াজ (কুচি করা), ২ কাপ চিকেন বা সবজি স্টক, ১ কাপ দুধ, ১ চামচ মাখন, লবণ ও গোলমরিচ স্বাদমতো ।
প্রস্তুত প্রণালী ঃ মাখন গরম করে পেঁয়াজ ভাজুন। ব্রকলি ও স্টক দিয়ে ১০-১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন। মিশ্রণটি ব্লেন্ড করে নিন। দুধ দিয়ে আরও ৫ মিনিট রান্না করুন। লবণ, গোলমরিচ দিয়ে পরিবেশন করুন।
ব্রকলির চাষাবাদ পদ্ধতি
ব্রকলি চাষ করার জন্য কিছু নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এটি মূলত শীতকালীন সবজি, তবে কিছু উন্নত জাত গ্রীষ্মকালেও চাষ করা যায়। নিচে ব্রকলির চাষ পদ্ধতি ধাপে ধাপে তুলে ধরা হলোঃ
১. জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতিঃ উর্বর, দোআঁশ বা বেলে-দোআঁশ মাটি ব্রকলি চাষের জন্য উপযুক্ত।জমির pH মান ৫.৫–৬.৫ হলে ভালো ফলন হয়। জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করতে হবে। প্রতি শতকে ৫-৬ কেজি পচা গোবর বা কম্পোস্ট সার মাটির সাথে মিশিয়ে নিতে হবে।
২. বীজ বপন ও চারা তৈরিঃ ব্রকলির বীজ সরাসরি মাঠে বপন না করে প্রথমে নার্সারিতে চারা তৈরি করতে হয়। চারা তৈরির জন্য বীজতলায় ১-১.৫ সেন্টিমিটার গভীরে বীজ বপন করতে হবে। ১০-১২ দিন পর চারা বের হবে এবং ২৫-৩০ দিনের মধ্যে মূল জমিতে রোপণের উপযুক্ত হবে।
৩. চারা রোপণঃ চারা ৪-৫ টি পাতা বের হলে তা মূল জমিতে রোপণ করতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০-৬০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৪০-৪৫ সেমি রাখতে হবে।
৪. সার ব্যবস্থাপনাঃ প্রতি শতকে নিম্নলিখিত পরিমাণে সার দিতে হবেঃ
গোবর বা কম্পোস্ট সার: ৪০-৫০ কেজি, ইউরিয়া: ৩০০ গ্রাম, টিএসপি: ২০০ গ্রাম, এমওপি: ১৫০ গ্রাম।
সার প্রয়োগের নিয়ম: চারা রোপণের আগে গোবর, টিএসপি ও অর্ধেক এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা রোপণের ১০-১২ দিন পর প্রথম কিস্তিতে ইউরিয়া সার দিতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তি ৩০-৩৫ দিন পর দিতে হবে।
৫. সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনাঃ জমি শুকনো থাকলে হালকা সেচ দিতে হবে। আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে যাতে গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত না হয়।
৬. রোগ ও পোকামাকড় দমনঃ ড্যাম্পিং অফ (চারা মরে যাওয়া): কার্বেনডাজিম জাতীয় ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। পাতা খেকো পোকা: ডায়াজিনন বা ইমিডাক্লোরোপিড ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। জাব পোকা: সাবান পানির স্প্রে বা অ্যাসাটাফ ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. ফসল সংগ্রহঃ বীজ বপনের ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ব্রকলির ফুল পরিপক্ক হয়ে কাটার উপযুক্ত হয়। কাটার সময় ১০-১৫ সেমি অংশ রেখে দিতে হয়, যাতে আবার ছোট ছোট কুঁড়ি বের হয়।সঠিক পরিচর্যা করলে প্রতি শতকে ২০-২৫ কেজি পর্যন্ত ব্রকলি উৎপাদন করা সম্ভব।
ব্রকলির অপকারিতা
ব্রকলি সাধারণত একটি পুষ্টিকর সবজি, তবে কিছু ক্ষেত্রে এটি কিছু মানুষের জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে। এর সম্ভাব্য অপকারিতাগুলো হলো: ১। গ্যাস্ট্রিক ও ফাঁপাভাব: ব্রকলিতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকায় এটি হজম হতে সময় নেয় এবং অতিরিক্ত খেলে পেটে গ্যাস ও ফাঁপাভাব হতে পারে।
২। থাইরয়েডের সমস্যা: ব্রকলির মধ্যে গোয়াইট্রোজেন নামক একটি যৌগ থাকে, যা থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই যারা হাইপোথাইরয়েডিজমে (থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি) ভুগছেন, তাদের ব্রকলি কম খাওয়া ভালো।
৩। রক্তপাতের ঝুঁকি: ব্রকলিতে ভিটামিন কে বেশি থাকে, যা রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। কিন্তু যারা ব্লাড থিনার (রক্ত পাতলা করার ওষুধ) গ্রহণ করেন, তাদের জন্য এটি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৪। অ্যালার্জি: কিছু মানুষের ব্রকলির প্রতি অ্যালার্জি থাকতে পারে, যা ত্বকে চুলকানি, ফোলাভাব বা শ্বাসকষ্টের কারণ হতে পারে।
৫। কিডনির সমস্যা: ব্রকলিতে অক্সালেট থাকে, যা কিডনির পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে, বিশেষ করে যাদের ইতিমধ্যে কিডনির সমস্যা রয়েছে। যদি ব্রকলি খাওয়ার পর শরীরে কোনো নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ব্রকলি ও ফুলকপির মধ্যে পার্থক্য কি
ব্রকলি ও ফুলকপির মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছেঃ
১. রঙঃ ব্রকলি সাধারণত গাঢ় সবুজ রঙের হয়, তবে কিছু প্রজাতি বেগুনি রঙেরও হতে পারে।ফুলকপি সাধারণত সাদা হয়, তবে এটি সবুজ, বেগুনি বা হলুদ রঙেরও পাওয়া যায়।
২. গঠনঃ ব্রকলির ফুলের অংশগুলো ছোট ছোট গুচ্ছের মতো এবং এর ডাঁটা তুলনামূলক মোটা ও আঁশযুক্ত। ফুলকপির ফুলের অংশগুলো ঘন এবং শক্ত হয়, ডাঁটাও অপেক্ষাকৃত পাতলা।
৩. স্বাদ ও গন্ধঃ ব্রকলি খানিকটা মিষ্টি এবং হালকা তেতো স্বাদের হয়। ফুলকপি তুলনামূলকভাবে মৃদু ও নরম স্বাদের হয়।
৪. পুষ্টিগুণঃ ব্রকলি ভিটামিন C, K, এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ, পাশাপাশি এতে বেশি পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। ফুলকপি কম কার্বোহাইড্রেটযুক্ত ও ভিটামিন C সমৃদ্ধ, এটি সহজেই হজম হয়।
৫. রান্নার ব্যবহারঃ ব্রকলি সাধারণত সেদ্ধ, ভাপে রান্না, ভাজা বা কাঁচা সালাদে ব্যবহার করা হয়। ফুলকপি তরকারি, ভাজি, ভর্তা বা গ্রেভি ডিশে বেশি ব্যবহৃত হয়।
৬. চাষ ও বৃদ্ধিঃ ব্রকলি তুলনামূলক ঠান্ডা আবহাওয়ায় ভালো জন্মে এবং বেশি সময় ধরে চাষ করা হয়। ফুলকপি শীতপ্রধান সবজি, তবে কিছু জাত উষ্ণ আবহাওয়াতেও জন্মাতে পারে।
সংক্ষেপে, ব্রকলি ও ফুলকপি একই গোত্রভুক্ত হলেও তাদের স্বাদ, রঙ, পুষ্টিগুণ ও ব্যবহারের পার্থক্য রয়েছে।
ব্রকলির সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
ব্রকলি সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে কিছু সমস্যা হতে পারেঃ
গ্যাস ও পেট ফাঁপা: ব্রকলিতে প্রচুর ফাইবার থাকায় হজমে সমস্যা হতে পারে। থাইরয়েডের সমস্যা: ব্রকলিতে গোইট্রোজেন থাকে, যা অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে থাইরয়েডের কার্যকারিতা কমাতে পারে।
রক্ত পাতলা হওয়ার ঝুঁকিঃ এতে প্রচুর ভিটামিন কে থাকায় যারা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তাদের জন্য সমস্যা হতে পারে।
ব্রকলি কিভাবে সংরক্ষণ করবেন
ব্রকলি সংরক্ষণের সঠিক উপায় অনুসরণ করলে এটি দীর্ঘদিন তাজা রাখা সম্ভব। এখানে কয়েকটি উপায় দেওয়া হলো: ১. ফ্রিজে সংরক্ষণ: তাজা ব্রকলিঃ ব্রকলিকে ধোয়া ছাড়া কাগজের তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিক ব্যাগে রেখে ফ্রিজের ভেজিটেবল ড্রয়ারে রাখুন। এতে ৪-৫ দিন ভালো থাকবে।
সিদ্ধ করা ব্রকলি: হালকা সিদ্ধ (Blanch) করে ঠান্ডা করে নিন। তারপর এয়ারটাইট কন্টেইনারে বা জিপলক ব্যাগে ভরে ফ্রিজে রাখুন। এতে ৫-৭ দিন ভালো থাকবে।
আরো পড়ুনঃ
২. ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ (লং-টার্ম স্টোরেজ): ব্রকলিকে টুকরো করে ধুয়ে ২-৩ মিনিট ব্লাঞ্চ করুন (ফুটন্ত পানিতে সামান্য সিদ্ধ করে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে নিন)। ভালোভাবে শুকিয়ে জিপলক ব্যাগ বা এয়ারটাইট কন্টেইনারে রেখে ডিপ ফ্রিজে রাখুন। এতে ৬-১২ মাস পর্যন্ত ভালো থাকবে।
৩. ডিহাইড্রেট বা ফ্রিজ-ড্রাই পদ্ধতি: ব্রকলি ডিহাইড্রেট করলে এটি দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। শুকিয়ে গুঁড়ো করে স্যুপ বা অন্যান্য রান্নায় ব্যবহার করতে পারেন।
লেখকের শেষ বক্তব্য
ব্রকলি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর সবজি যা শরীরের জন্য বহুমুখী উপকার বয়ে আনে। এটি নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখলে হৃদরোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা যায়। তবে অতিরিক্ত খাওয়া উচিত নয়, কারণ এতে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সঠিকভাবে চাষ ও রান্না করলে এটি স্বাস্থ্যকর এবং সুস্বাদু খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
আপনি যদি এখনো ব্রকলি খাওয়া শুরু না করে থাকেন, তাহলে এটি খাদ্য তালিকায় যোগ করার কথা ভাবতে পারেন। আপনার শরীরের সুস্থতায় এটি দারুণ ভূমিকা রাখতে পারে। আমি ব্রকলির উপর বিশদ আলোচনা করেছি। আশা করি এ বিষয়ে আপনি প্রচুর জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছেন। আরো নতুন নতুন বিষয় জানতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন তাহলে নতুন নতুন আর্টিকেল দেখতে পাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url