যুক্তরাষ্ট্রে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি সম্বন্ধে কিছু জানেন কি
যুক্তরাষ্ট্রে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি সম্বন্ধে কিছু জানেন কি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে. এই ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির মাধ্যমে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েও অনেকেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন না. কারণ জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় না. জনগণের সরাসরি ভোটে ইলেক্টোর নির্বাচিত হন এবং ইলেক্তরদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন .
যে কারণে এই পদ্ধতি মাঝে মাঝে একটু বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে . এই আর্টিকেলে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিস্তারিত আলোচনা করব. আমাদের সাথে এই কনটেন্ট গুলি সম্পূর্ণ পাঠ করলে আপনি অনেক বিষয় জানতে পারবেন. তাই নিয়মিত আমাদের এই ওয়েবসাইট ভিজিট করুন.
যুক্তরাষ্ট্রে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি কি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন একটি জটিল ও অনন্য প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ গণতান্ত্রিক দেশে সরাসরি জনপ্রিয় ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হয়, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইলেক্টোরাল কলেজ নামক একটি বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই পদ্ধতি অনুযায়ী, নাগরিকরা সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন ন, বরং তারা ইলেক্টরদের (electors) নির্বাচিত করেন, যারা পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেন।
ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণেতারা তৈরি করেন, যার মূল উদ্দেশ্য ছিল বড় ও ছোট রাজ্যের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং জনসাধারণের সরাসরি ভোটের পরিবর্তে একটি প্রতিনিধিত্বমূলক ব্যবস্থা গঠন করা। কিন্তু আধুনিককালে এই পদ্ধতি ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে. কারণ এটি কখনো কখনো এমন প্রার্থীদের জয়ী করে যাঁরা জনপ্রিয় ভোটে পরাজিত হয়েছেন।
এই নিবন্ধে ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির ইতিহাস,কার্যপ্রণালী, সুবিধা-অসুবিধা, বিতর্ক, এবং সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ইলেক্টোরাল কলেজের ইতিহাস
ইলেক্টোরাল কলেজের ধারণাটি ১৭৮৭ সালের যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান প্রণয়ন সভায় গৃহীত হয়। সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম লক্ষ্য ছিল এমন একটি নির্বাচন ব্যবস্থা তৈরি করা যা জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দেবে, তবে সরাসরি ভোটের পরিবর্তে কিছুটা নিয়ন্ত্রিত ও ভারসাম্যপূর্ণ হবে।
কেন এই ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিল?
সংবিধান প্রণেতারা সরাসরি জনপ্রিয় ভোটের পরিবর্তে ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থার পক্ষে কিছু যুক্তি দিয়েছিলেন:
আরো পড়ুন:
১. সংগঠিত তথ্যপ্রবাহের অভাব: ১৮শ শতকে গণতন্ত্র নতুন ধারণা ছিল এবং সাধারণ জনগণের রাজনৈতিক তথ্য সীমিত ছিল। সরাসরি ভোট হলে অনেকে অযোগ্য বা জনপ্রিয় কিন্তু অনুপযুক্ত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারতেন।
২.ছোট রাজ্যগুলোর স্বার্থরক্ষা: যুক্তরাষ্ট্রের ছোট রাজ্যগুলো চাইছিল যে বড় রাজ্যগুলোর তুলনায় তাদের কণ্ঠস্বর ক্ষীণ না হয়।
৩. সংখ্যাগরিষ্ঠের আধিপত্য ঠেকানো: তারা চেয়েছিলেন যে এক বা দুটি জনবহুল রাজ্য পুরো দেশের নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে।
এজন্য, ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থা গৃহীত হয়, যা সরাসরি জনগণের ভোটের পরিবর্তে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার সুযোগ দেয়।
ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতির গুরুত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের ইলেক্টোরাল কলেজ পদ্ধতি দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের একটি অনন্য ব্যবস্থা, যা সাধারণ জনগণের সরাসরি ভোটের পরিবর্তে এক বিশেষ প্রতিনিধি পরিষদের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন করে। এর গুরুত্ব কয়েকটি মূল দিক থেকে বিবেচনা করা যায়:
ইলেকট্রোলাল কলেজে কারা থাকেন
ইলেক্টোরাল কলেজ মূলত একটি বিশেষ নির্বাচনী ব্যবস্থা, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই কলেজে থাকার লোকদের ইলেক্টর (Electors) বলা হয়।
কে ইলেক্টর হন: ১. প্রতিটি রাজ্যের প্রতিনিধি: প্রতিটি রাজ্যের কংগ্রেসে (সিনেট + হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস) মোট সদস্যসংখ্যার সমানসংখ্যক ইলেক্টর থাকে।
২. রাজ্য কর্তৃক মনোনীত: প্রতিটি রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজস্ব ইলেক্টরদের মনোনয়ন দেয়। সাধারণত দলীয় নেতারা, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় ব্যক্তিরা ইলেক্টর হন।
৩. সংখ্যা: মোট ৫৩৮ জন ইলেক্টর আছেন (৫০ রাজ্য + ওয়াশিংটন, ডিসি)। প্রেসিডেন্ট হতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট পেতে হয়।
ইলেক্টোরাল কলেজ কীভাবে কাজ করে: জনগণ ভোট দেয়, তবে সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে না।প্রতিটি রাজ্যের জনগণের ভোটের ফলাফলের ভিত্তিতে সেই রাজ্যের ইলেক্টররা একটি নির্দিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দেন। সাধারণত "Winner Takes All" নিয়মে রাজ্যের সব ইলেক্টোরাল ভোট এক প্রার্থী পান (কেবল নেব্রাস্কা ও মেইন আলাদা নিয়ম অনুসরণ করে)। পরে, ইলেক্টোররা আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট প্রদান করেন, এবং কংগ্রেস এই ভোট গণনা করে প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করে।
ইলেক্টোরাল কলেজের কার্যপ্রণালী
১. ইলেক্টোরাল ভোট কীভাবে গণনা করা হয়?
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে মোট ৫৩৫ জন সদস্য রয়েছেন. ১০০ জন সিনেটর এবং ৪৩৫ জন প্রতিনিধি। প্রতিটি রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোটের সংখ্যা নির্ধারিত হয়:
প্রতিটি রাজ্যের মোট ইলেক্টোরাল ভোট = সিনেটের ২টি আসন + প্রতিনিধি পরিষদে থাকা আসনের সংখ্যা। মোট ইলেক্টোরাল ভোট: ৫৩৮ (৫৩৫ + ওয়াশিংটন ডিসির ৩ ভোট)। বিজয়ী হতে প্রয়োজন ২৭০ ভোট.
২. ভোটিং পদ্ধতি: ১. জনগণের ভোট: নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবার জনগণ ভোট দেয়। তবে এই ভোট সরাসরি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে না, বরং ইলেক্টরদের নির্বাচন করে।
৩ . কংগ্রেসে ফলাফল ঘোষণা: জানুয়ারির ৬ তারিখের মধ্যে কংগ্রেস আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট গণনা করে এবং বিজয়ী ঘোষণা করে।
৩. ব্যাটলগ্রাউন্ড (Swing) স্টেটের ভূমিকা:
কিছু রাজ্য ঐতিহাসিকভাবে নির্দিষ্ট দলের প্রতি অনুগত থাকে (যেমন, ক্যালিফোর্নিয়া সাধারণত ডেমোক্র্যাটিক পার্টির দিকে ঝোঁকে), কিন্তু কিছু রাজ্য প্রতি নির্বাচনে পরিবর্তন হয়। এসব রাজ্যকে ব্যাটলগ্রাউন্ড বা সুইং স্টেট বলা হয় (যেমন ফ্লোরিডা, পেনসিলভানিয়া, উইসকনসিন)। সুইং স্টেটগুলোর ইলেক্টোরাল ভোট অনেক সময় পুরো নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে।
ইলেক্টোরাল কলেজের সুবিধা ও অসুবিধা
সুবিধাসমূহ: ১. ছোট রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে: ইলেক্টোরাল কলেজ বড় রাজ্যগুলোর তুলনায় ছোট রাজ্যগুলোর গুরুত্ব বাড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াইমিং রাজ্যে জনসংখ্যা খুব কম হলেও তাদের অন্তত ৩টি ইলেক্টোরাল ভোট রয়েছে।
৩. সংখ্যালঘুদের কণ্ঠস্বর রক্ষা করে: ইলেক্টোরাল কলেজের কারণে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অঞ্চলের কণ্ঠস্বর তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্ব পায়।
অসুবিধাসমূহ: ১. জনপ্রিয় ভোটের বিজয়ী সবসময় প্রেসিডেন্ট হয় না.
২০১৬ সালের নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটন প্রায় ৩০ লাখ বেশি জনপ্রিয় ভোট পেয়েও পরাজিত হন, কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলেক্টোরাল ভোটে জয় পান।
২. কয়েকটি রাজ্যের অতিরিক্ত গুরুত্ব: সুইং স্টেটগুলোতে প্রচারণা বেশি হয়, কিন্তু যেসব রাজ্যে একদলীয় সমর্থন বেশি, সেখানে ভোটারদের গুরুত্ব কমে যায়
৩. "Winner-Takes-All" পদ্ধতি: বেশিরভাগ রাজ্যে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান, তিনিই পুরো রাজ্যের ইলেক্টোরাল ভোট পেয়ে যান। ফলে সংখ্যালঘু ভোটারদের মতামত বিবেচনায় আসে না।
ইলেক্টোরাল কলেজের বিতর্ক ও সমালোচনা
বিতর্কিত নির্বাচন: ইতিহাসে কয়েকবার এমন ঘটনা ঘটেছে যেখানে একজন প্রার্থী জনপ্রিয় ভোটে জিতেও প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি:
আরো পড়ুন:
১৮৭৬: রাদারফোর্ড বি. হেইস বনাম স্যামুয়েল টিলডেন, ১৮৮৮: বেঞ্জামিন হ্যারিসন বনাম গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড, ২০০০: জর্জ ডব্লিউ বুশ বনাম আল গোর, ২০১৬: ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম হিলারি ক্লিনটন
সম্ভাব্য পরিবর্তনের প্রস্তাব: ১. ন্যাশনাল পপুলার ভোট কম্প্যাক্ট (NPV Compact): কিছু রাজ্য এমন একটি ব্যবস্থা গ্রহণ করছে যেখানে তারা জনপ্রিয় ভোটের বিজয়ীকে তাদের ইলেক্টোরাল ভোট প্রদান করবে।
২. প্রতিনিধিত্বমূলক ইলেক্টোরাল ভোটিং: কিছু রাজ্য (যেমন মেইন এবং নেব্রাস্কা) Winner-Takes-All এর পরিবর্তে জেলার ভিত্তিতে ইলেক্টোরাল ভোট ভাগ করে।
আমাদের শেষ কথা
ইলেক্টোরাল কলেজ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ, তবে এটি বিতর্কিতও বটে। এটি ছোট রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করলেও অনেক সময় জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় না।
ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থা পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা এবং রাজনৈতিক বাধাগুলোর কারণে এটি সহজ হবে না। তবে, যে কোনো পরিবর্তনই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আশা করি আমাদের এই আর্টিকেল পাঠ করে আপনি বিস্তারিত জানতে পেরেছেন. আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন তাহলে আমরা নতুন নতুন কনটেন্ট আপনাদের সম্মুখে পেশ করতে পারব.
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url