যেভাবে চিয়া সিড খেলে কোলেস্টেরল কমবে
যেভাবে চিয়া সিড খেলে কোলেস্টেরল কমবে
চিয়া সিড (Chia Seed) এখন সুপারফুড হিসেবে বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এটি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মিনারেলে পরিপূর্ণ। বিশেষ করে, চিয়া সিডের উচ্চ ফাইবার ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কোলেস্টেরল কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এখানে আমরা আলোচনা করবো চিয়া সিড কি, কীভাবে চিয়া সিড কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে, কিভাবে এটি খাবেন এবং এর অন্যান্য স্বাস্থ্য উপকারিতা। আপনি আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পাঠ করুন তাহলে চিয়া সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবেন.
চিয়া সিড কি ? চিয়া সিডের পুষ্টিগুণ
চিয়া সিড (Chia Seed) হলো সালভিয়া হিস্পানিকা (Salvia hispanica) উদ্ভিদের বীজ, যা মূলত মেক্সিকো এবং গুয়াতেমালায় উৎপন্ন হয়। এটি একটি পুষ্টিগুণে ভরপুর সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যালসিয়াম এবং আয়রন রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ
চিয়া সিড ছোট আকারের হলেও এতে রয়েছে অনেক পুষ্টি উপাদান। প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া সিডে থাকে: প্রোটিন: ১৬-১৭ গ্রাম, ফাইবার: ৩৪-৩৫ গ্রাম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড: ১৭-১৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম:, ৬৩০-৬৫০ মিগ্রা, আয়রন: ৭.৭ মিগ্রা, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস: প্রচুর পরিমাণে, ভিটামিন ও মিনারেল: পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, ফসফরাস, বি-ভিটামিন ইত্যাদি।
চিয়া সিডের স্বাস্থ্য উপকারিতা
হজমে সহায়ক, এতে উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকায় হজম ভালো হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে সাহায্য করে। ওজন কমাতে সহায়ক – পানি শোষণ করে এটি ফুলে যায়, ফলে দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি দেয়। হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় – ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে – রক্তে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। হাড় ও দাঁতের জন্য উপকারী – এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস থাকে। ত্বক ও চুলের জন্য ভালো – এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
পানিতে ভিজিয়ে ১ চা চামচ চিয়া সিড ১০-১৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে পান করা যায়।স্মুদি বা জুসে মিশিয়ে যেকোনো ফলের স্মুদি বা জুসের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যায়। দই বা ওটমিলে মিশিয়ে সকালের, নাস্তায় যোগ করা যেতে পারে। সালাদে মিশিয়ে পুষ্টিগুণ বাড়াতে সালাদে ব্যবহার করা যায়। চিয়া সিড নিয়মিত খেলে শরীর সুস্থ ও সক্রিয় থাকে। তবে অতিরিক্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত, কারণ এতে উচ্চমাত্রার ফাইবার থাকায় অতিরিক্ত খেলে পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে।
চিয়া সিড কতক্ষণ ভিজিয়ে রাখতে হবে
চিয়া সিড সাধারণত ২-৩ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখলে এটি জেলির মতো হয়ে যায় এবং সহজে খাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো ফল পেতে সারা রাত (৬-৮ ঘণ্টা) ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে।
ভিজানোর নিয়মঃ পানি বা দুধের অনুপাতে: প্রতি ১ টেবিল চামচ চিয়া সিডের জন্য ৩-৪ টেবিল চামচ পানি বা দুধ নিন। ভালো করে নেড়ে ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন, এরপর আরও একবার নেড়ে রেখে দিন। যদি দ্রুত খেতে চান, তাহলে হালকা গরম পানি ব্যবহার করলে এটি দ্রুত ফোলা শুরু করবে।
কোলেস্টেরল কী এবং কেন এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি
কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের চর্বি যা আমাদের শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি কোষ গঠনে, হরমোন উৎপাদনে এবং ভিটামিন ডি তৈরিতে সহায়ক। তবে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল, বিশেষ করে LDL (Low-Density Lipoprotein) বা ‘খারাপ কোলেস্টেরল’ রক্তনালিতে জমে গিয়ে বিভিন্ন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অন্যদিকে, HDL (High-Density Lipoprotein) বা ‘ভালো কোলেস্টেরল’ শরীর থেকে খারাপ কোলেস্টেরল দূর করতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত কোলেস্টেরল হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং উচ্চ রক্তচাপের কারণ হতে পারে। এজন্য এটি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কীভাবে চিয়া সিড কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
চিয়া সিড এমন কিছু পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিচে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১। উচ্চ মাত্রার ফাইবার কোলেস্টেরল শোষণ কমায়: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে দ্রবণীয় ফাইবার (soluble fiber) থাকে। এটি হজমপ্রক্রিয়ায় একটি জেলযুক্ত পদার্থ তৈরি করে, যা অন্ত্রে কোলেস্টেরল শোষণ কমাতে সাহায্য করে। ফলে রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায় এবং HDL কোলেস্টেরল বৃদ্ধিপায়।
২। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রক্তনালী সুস্থ রাখে: চিয়া সিডের অন্যতম প্রধান উপাদান হলো ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি রক্তনালিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে, প্রদাহ কমায়, এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) হ্রাস করে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৩। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দেয়: চিয়া সিডে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা রক্তে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া থেকে রক্ষা করে এবং শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৪। প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ক্ষতিকর চর্বি কমাতে সহায়ক: চিয়া সিড উচ্চ প্রোটিনযুক্ত হওয়ায় এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরিয়ে রাখে এবং অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমায়। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে, যা কোলেস্টেরল কমানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫। ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়:ইনসুলিন প্রতিরোধিতা থাকলে শরীর ফ্যাট জমাতে বেশি প্রবণ হয়ে ওঠে, যা উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণ হতে পারে। চিয়া সিড ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়িয়ে মেটাবলিজম উন্নত করতে সাহায্য করে, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়া সাধারণত নিরাপদ এবং উপকারী হতে পারে, তবে কিছু বিষয় মাথায় রাখা দরকার।
১। পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুনঃ দিনে ১-২ চা চামচ (প্রায় ১৫-২০ গ্রাম) চিয়া সিড খাওয়া নিরাপদ।
২। ভিজিয়ে খান – চিয়া সিড প্রচুর পানি শোষণ করে, তাই এটি ভিজিয়ে বা পানির সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো হয়।
৩। পর্যাপ্ত পানি পান করুন – এটি ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমের জন্য বেশি পানি পান করা জরুরি, না হলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে।
৪। স্মুদি বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খান – চিয়া সিডকে স্মুদি, ওটমিল, দই বা জুসের সাথে মিশিয়ে খেলে সহজে হজম হয়।
৫। নতুন করে খেতে শুরু করলে সামান্য পরিমাণ নিন – যদি আগে না খেয়ে থাকেন, তবে প্রথমে অল্প পরিমাণ নিয়ে শরীরের প্রতিক্রিয়া দেখুন।
গর্ভাবস্থায় চিয়া সিডের উপকারিতাঃ ফাইবার সমৃদ্ধঃ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যা শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশে সহায়ক। প্রোটিন ও ক্যালসিয়াম থাকে যা মা ও শিশুর হাড়ের গঠনে সহায়তা করে। আয়রন আছে – রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।
অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক বা ফোলাভাব হতে পারে। যদি আগে থেকেই নিম্ন রক্তচাপ বা রক্ত পাতলা করার ওষুধ খান, তবে আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে খাওয়ার আগে সতর্ক থাকুন। আপনি যদি চিয়া সিড খাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে চান, তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করাই ভালো।
দুধের সাথে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড (Chia Seeds) দুধের সাথে খেলে পুষ্টিগুণ আরও বেড়ে যায়। তবে এটি খাওয়ার সঠিক নিয়ম জানা দরকার।
১। ভিজিয়ে খাওয়া ঃ ১-২ টেবিল চামচ চিয়া সিড ½ কাপ পানিতে বা দুধে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা (সর্বোত্তম ফল পেতে রাতে) ভিজিয়ে রাখুন। এতে সিড ফুলে যায় এবং সহজে হজম হয়।
২। দুধের সাথে মিশিয়েঃ গরম বা ঠান্ডা দুধে ভিজিয়ে ব্লেন্ড করে স্মুদি তৈরি করা যায়। রাতে ভিজিয়ে রেখে সকালে পুডিং হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। ওটস বা সিরিয়ালের সাথে মিশিয়ে নাশতায় খাওয়া যায়।
৩। স্বাদ বাড়াতেঃ মধু, ফল, বাদাম বা দারচিনি মিশিয়ে খেলে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়বে।
দৈনিক ১-২ টেবিল চামচের বেশি খাওয়া উচিত নয়। পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কারণ এটি শরীরে ফাইবার বাড়ায়। গ্যাস্ট্রিক বা পেট ফাঁপার সমস্যা হলে কম পরিমাণে খান।
রমজান মাসে চিয়াসিড খাওয়ার নিয়ম
রমজান মাসে চিয়া সিড খেলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে, এনার্জি বৃদ্ধি পায় এবং হজমের সমস্যাও কমে। তবে সঠিক নিয়মে খাওয়া জরুরি।
সাহরিতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ
১। ভিজিয়ে খাওয়া: ১-২ চা চামচ চিয়া সিড ১৫-২০ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর দুধ, স্মুদি বা ওটমিলের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন।
২। ডিটক্স ওয়াটার: এক গ্লাস পানিতে ১ চামচ চিয়া সিড, লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে পান করুন। এটি সারাদিন পানিশূন্যতা দূর করতে সাহায্য করবে।
৩। ইউগার্ট বা দইয়ের সঙ্গে: দইয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খেলে এটি হজমে সহায়ক হয় এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভূতি দেয়।
ইফতারে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়মঃ ১। শরবতের সঙ্গে: এক গ্লাস ঠান্ডা শরবতে (লেবুর শরবত, তোকমার শরবত, বা ফলের জুস) ১ চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে পান করুন।
২। স্মুদি: কলা, খেজুর ও দুধের স্মুদিতে চিয়া সিড যোগ করলে এটি স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর হয়।
৩। সুপারফুড বোল: চিয়া সিড, দই, মধু ও ফলের মিশ্রণে সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর ইফতার তৈরি করতে পারেন।
দিনে ১-২ চামচের বেশি চিয়া সিড না খাওয়াই ভালো, বেশি খেলে পেটে গ্যাস বা ফোলাভাব হতে পারে।যদি আগে কখনও চিয়া সিড না খেয়ে থাকেন, তাহলে অল্প পরিমাণে শুরু করুন।পর্যাপ্ত পানি পান করুন, কারণ চিয়া সিড ফাইবারসমৃদ্ধ এবং পানি কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে। রমজানে এভাবে চিয়া সিড খেলে শরীরের শক্তি বজায় থাকবে এবং সুস্থ থাকা যাবে।
সকালে না রাতে কোন সময় চিয়াসিড খেলে বেশি উপকার হয়
চিয়া সিড খাওয়ার উপযুক্ত সময় নির্ভর করে আপনার লক্ষ্য এবং শরীরের চাহিদার ওপর। তবে সাধারণতসকালে খেলেঃ এনার্জি বৃদ্ধি: চিয়া সিড ফাইবার ও প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি সকালের নাশতায় খেলে সারাদিন এনার্জি পাওয়া যায়। ওজন কমাতে সাহায্য করে: সকালে খেলে এটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখে এবং ক্ষুধা কমায়। হজমের জন্য ভালো: ফাইবার থাকার কারণে এটি পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে।
রাতে খেলেঃ ঘুমের মান উন্নত করে: এতে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এবং ট্রিপটোফ্যান ভালো ঘুমে সহায়তা করে। রাতে মেটাবলিজম বাড়ায়: ঘুমের মধ্যে দেহের কোষ পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করে। পেট পরিষ্কার রাখে: সকালে সহজে মলত্যাগে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে চাইলে সকালে খাওয়া ভালো। ভালো ঘুম ও হজমের জন্য রাতে খেতে পারেন। আপনি চাইলে সকালে বা রাতে যেকোনো সময় খেতে পারেন, তবে নিয়মিত খাওয়াই সবচেয়ে উত্তম।
কিভাবে চিয়া সিড খাবেন কোলেস্টেরল কমানোর জন্য
চিয়া সিড খাওয়ার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। নিচে কিছু সহজ ও কার্যকর পদ্ধতি দেওয়া হলো:
১. পানিতে ভিজিয়ে খাওয়া (Chia Gel): চিয়া সিড পানিতে ভিজিয়ে খেলে এটি জেলি জাতীয় পদার্থে পরিণত হয়, যা ফাইবারের কার্যকারিতা বাড়িয়ে দেয় এবং হজমে সাহায্য করে।
পদ্ধতি: ১ গ্লাস পানিতে ১-২ টেবিল চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে ৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। এটি সকালে খালি পেটে অথবা দুপুরে পান করুন।
২. স্মুদি ও জুসের সাথে মিশিয়ে খাওয়া: চিয়া সিড আপনার প্রতিদিনের স্মুদি ও জুসের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখবে। উপাদান: ১ গ্লাস ফলের জুস বা স্মুদি: ১ চামচ চিয়া সিড
৩. ওটমিল বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়া: আপনি চিয়া সিড ওটমিল, গ্রানোলা বা দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এটি একটি স্বাস্থ্যকর প্রাতঃরাশ হিসেবে দারুণ উপকারী। পদ্ধতি: ১ কাপ দই বা ওটমিলে ১ চামচ চিয়া সিড মিশিয়ে খান।
৪. সালাদ ও স্যুপের সাথে ব্যবহার : চিয়া সিড সালাদ ও স্যুপের উপর ছিটিয়ে দিলে এটি পুষ্টিমান বাড়িয়ে দেয় এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।পদ্ধতি: সালাদের উপর ১ চামচ চিয়া সিড ছিটিয়ে নিন। স্যুপের সাথে মিশিয়ে খান।
আরো পড়ুনঃ
৫. চিয়া পুডিং বানিয়ে খাওয়া: চিয়া পুডিং এক ধরনের স্বাস্থ্যকর ও মজাদার খাবার যা কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক। উপাদান: ১ কাপ দুধ (আমন্ড মিল্ক/কোকোনাট মিল্ক), ২ টেবিল চামচ চিয়া সিড, ১ চামচ মধু, ফল ও বাদাম (অপশনাল). পদ্ধতি: সব উপাদান মিশিয়ে ৩-৪ ঘণ্টা বা সারা রাত ফ্রিজে রাখুন। সকালে পুডিং খেয়ে নিন।
চিয়া সিড খাওয়ার সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
চিয়াসিড (Chia Seeds) সুপারফুড হিসেবে পরিচিত এবং এতে প্রচুর ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তবে এটি গ্রহণের আগে কিছু সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা জরুরি।
সতর্কতা: অতিরিক্ত ফাইবার গ্রহণের ঝুঁকি: চিয়াসিডে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা অতিরিক্ত খেলে গ্যাস, পেট ফাঁপা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। অ্যালার্জি: কিছু মানুষের চিয়াসিডে অ্যালার্জি হতে পারে, যা চুলকানি, র্যাশ, শ্বাসকষ্ট বা হাঁচির কারণ হতে পারে। রক্ত পাতলা করার প্রভাব: চিয়াসিড ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ, যা রক্ত পাতলা করতে সাহায্য করে। তবে যারা ব্লাড থিনার (যেমন ওয়ারফারিন বা অ্যাসপিরিন) গ্রহণ করেন, তাদের এটি খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রক্তচাপ কমানোর সম্ভাবনা: উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ গ্রহণকারী ব্যক্তিদের জন্য এটি রক্তচাপ অতিরিক্ত কমিয়ে দিতে পারে। গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মায়েরা: এই সময় চিয়াসিড খাওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
সম্ভাব্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া: পাচনতন্ত্রের সমস্যা: অতিরিক্ত ফাইবারের কারণে গ্যাস, ডায়রিয়া বা পেট ব্যথা হতে পারে। শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি: শুকনো চিয়াসিড সরাসরি খেলে এটি গলায় আটকে যেতে পারে, কারণ এটি পানি শোষণ করে ফুলে ওঠে। রক্তে সুগারের মাত্রা কমানো: চিয়াসিড রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে পারে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে খাওয়া উচিত।
লেখকের শেষ মতামত
চিয়া সিড কোলেস্টেরল কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী একটি প্রাকৃতিক খাদ্য। এটি ফাইবার, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম ও পর্যাপ্ত পানি পান করলেই কোলেস্টেরল স্বাভাবিক মাত্রায় রাখা সম্ভব। আপনি ক্লাসিড সমন্ধে অনেক কিছুই জানতেন না। আমাদের এই আর্টিকেলটি এ টু জেড মনোযোগ দিয়ে করলে অনেক কিছু জানতে পারবেন।
এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনি প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড যোগ করুন এবং সুস্থ জীবন উপভোগ করুন। এই ধরনের আর্টিকেল নিয়মিত করতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন এবং ফলো করুন। তাহলে আমরা নতুন নতুন কনটেন্ট আপনাদেরকে উপহার দিতে পারব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url