তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সহজ পদ্ধতি জেনে নিন
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সহজ পদ্ধতি জেনে নিন
সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য নিয়মিত এবং পরিণত ঘুম অতীব জরুরী। পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম হলে মন মেজাজ শান্ত থাকে এবং ব্রেন অসুস্থ থাকে। তাই সুস্থ মন এবং সুস্থ দেহের জন্য ভালো ঘুম খুবই দরকারি।
আমরাই প্রবন্ধে পরিমিত এবং পর্যাপ্ত ঘুমের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আপনারা এই আর্টিকেলটি এ টু জেড অধ্যয়ন করুন তাহলে ঘুম না আসার কারণ বিস্তারিত জানতে পারবেন।
ঘুমের প্রয়োজনীয়তা কি
পর্যাপ্ত ঘুমের উপকারিতা
অনিদ্রার কারণ
অনিদ্রার অনেক কারণ থাকতে পারে, যা সাধারণত শারীরিক, মানসিক বা জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পর্কিত।
১. মানসিক ও আবেগজনিত কারণ:উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতা (ডিপ্রেশন), অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ট্রমা বা কোনো দুঃখজনক ঘটনা
২. শারীরিক কারণ: দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা (যেমন: বাত, মাইগ্রেন), হরমোনজনিত পরিবর্তন (যেমন: থাইরয়েড সমস্যা), শ্বাসকষ্টজনিত রোগ (যেমন: অ্যাজমা, স্লিপ অ্যাপনিয়া)।
৩. জীবনযাত্রাগত কারণ: অতিরিক্ত ক্যাফেইন (চা, কফি, সোডা) গ্রহণ, ধূমপান বা মদ্যপান, রাতে মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটার ব্যবহার, অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব
৪. ওষুধ ও অন্যান্য কারণ: কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, জেট ল্যাগ (ভ্রমণের কারণে সময় পরিবর্তন), রাতে ভারী খাবার খাওয়া
সমাধান: অনিদ্রা দূর করতে নিয়মিত ঘুমের সময় মেনে চলা, মানসিক চাপ কমানো, ক্যাফেইন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস কম ব্যবহার করা এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
অনিদ্রার লক্ষণ ও প্রতিকার
অনিদ্রা হলো ঘুমের সমস্যা বা পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়ার অবস্থা। এর কিছু সাধারণ লক্ষণ হলো:1. ঘুমাতে অসুবিধা হওয়া – অনেক চেষ্টা করেও সহজে ঘুম আসে না। বারবার ঘুম ভেঙে যাওয়া – রাতে বারবার ঘুম ভেঙে যায় এবং আবার ঘুমাতে সমস্যা হয়। ভোরে ঘুম ভেঙে যাওয়া – প্রয়োজনের চেয়ে আগে ঘুম থেকে জেগে যাওয়া এবং পুনরায় ঘুমাতে না পারা। ঘুমের পরেও ক্লান্তি অনুভব করা – পর্যাপ্ত সময় ঘুমানোর পরও সতেজ না বোধ করা। মনোযোগ কমে যাওয়া ও ভুলে যাওয়া – ঘুমের অভাবে কাজে মনোযোগ দিতে না পারা। মেজাজ খিটখিটে হওয়া – বিরক্তি, উদ্বেগ বা হতাশা বেড়ে যাওয়া। শারীরিক দুর্বলতা – ঘন ঘন মাথা ব্যথা, শরীরে শক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
অনিদ্রার প্রতিকার:
অনিদ্রা দূর করতে কিছু কার্যকর পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে,
১. ভালো ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং উঠুন, এমনকি সপ্তাহান্তেও।ঘুমানোর অন্তত ৩০ মিনিট আগে মোবাইল, টিভি বা কম্পিউটার ব্যবহার বন্ধ করুন। ঘুমানোর জন্য একটি আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন (অন্ধকার, নীরব, আরামদায়ক বিছানা)।
২. খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন: ঘুমের আগে চা, কফি বা নিকোটিন গ্রহণ এড়িয়ে চলুন।খুব ভারী বা মসলাদার খাবার রাতে না খাওয়া ভালো। দুধ, বাদাম, কলা, মধু ইত্যাদি ঘুমের জন্য উপকারী খাবার হিসেবে কাজ করতে পারে।
৩. মানসিক চাপ কমানো:ধ্যান, যোগব্যায়াম বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন। বই পড়া, নরম সঙ্গীত শোনা বা হালকা গরম পানিতে গোসল করলে ঘুম ভালো হতে পারে।
৪. নিয়মিত ব্যায়াম করা: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন। তবে ঘুমানোর ঠিক আগে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
৫. প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রা চলতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কখনোই নিজে থেকে ঘুমের ওষুধ খাওয়া উচিত নয়।আপনি যদি দীর্ঘদিন ধরে অনিদ্রায় ভুগে থাকেন, তাহলে জীবনধারা পরিবর্তনের পাশাপাশি চিকিৎসা নেওয়ার কথাও ভাবতে পারেন।
রাতে ঘুম না হওয়ার কারণ কি
রাতে ঘুম না হওয়ার (অনিদ্রা) অনেক কারণ থাকতে পারে। এটি শারীরিক, মানসিক বা পরিবেশগত কারণের জন্য হতে পারে। কিছু সাধারণ কারণ হলো:
১. মানসিক চাপ ও উদ্বেগঃ দুশ্চিন্তা, হতাশা বা অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। পরীক্ষা, কাজের চাপ বা ব্যক্তিগত সমস্যা থাকলে মন শান্ত না থাকায় ঘুম আসতে দেরি হয়।
২. অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপনঃ রাতে দেরিতে ক্যাফেইন (চা, কফি, চকোলেট) বা নিকোটিনযুক্ত খাবার খেলে ঘুম ব্যাহত হতে পারে।বেশি মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি দেখার ফলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে, যা ঘুম আসতে দেয় না। অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি থাকলে শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি (biological clock) বিঘ্নিত হয়।
৩. শারীরিক সমস্যাঃ অ্যাসিডিটি, গ্যাস্ট্রিক, শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যা থাকলে রাতে ঘুম আসতে দেরি হতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে ব্যথা (যেমন: মাথাব্যথা, আর্থ্রাইটিস) থাকলে আরামদায়ক ঘুম হয় না।
৪. পরিবেশগত কারণঃ ঘরের তাপমাত্রা খুব বেশি গরম বা ঠান্ডা হলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।বেশি আলো, শব্দ বা অস্বস্তিকর বিছানা থাকলে ঘুম ঠিকমতো হয় না।
৫. অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা ও ওভারথিঙ্কিংঃ অনেক মানুষ ঘুমানোর সময় বেশি চিন্তা করতে থাকেন, যার ফলে মস্তিষ্ক বিশ্রাম নিতে পারে না এবং ঘুম আসতে দেরি হয়।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। রাতে মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস কম ব্যবহার করুন। ধ্যান বা মেডিটেশন করুন, এতে মন শান্ত থাকবে। হালকা খাবার খান এবং রাতে অতিরিক্ত চা-কফি এড়িয়ে চলুন।
রাতে ঘুম না হলে কি কি রোগ হয়
রাতে নিয়মিত ঘুম না হলে শরীরে ও মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কিছু সাধারণ রোগ ও শারীরিক জটিলতা হলো:
১. মানসিক সমস্যাঃ দুশ্চিন্তা ও উদ্বেগ (Anxiety, ডিপ্রেশন (Depression),স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া
২. হার্টের সমস্যাঃ উচ্চ রক্তচাপ (High Blood Pressure), হৃদরোগের ঝুঁকি (Heart Disease)
৩. ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধিঃ ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ওজন বেড়ে যেতে পারে (Obesity)।
৪. ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে যাওয়া ঃ শরীর সহজেই বিভিন্ন ইনফেকশনে আক্রান্ত হতে পারে।
৫. স্নায়ুজনিত সমস্যাঃ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, কনসেনট্রেশনের সমস্যা হওয়া।
৬. পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাঃ অ্যাসিডিটি ও হজমের সমস্যা ।
নিয়মিত কম ঘুমালে দীর্ঘমেয়াদে আরও মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা জরুরি।
রাতে ঘুম না আসলে কি কি ক্ষতি হয়
রাতে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীর ও মনের উপর নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রধান ক্ষতি হলোঃ
শারীরিক ক্ষতিঃ ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে – ঘুমের অভাবে শরীর সহজেই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ে – অনিদ্রা দীর্ঘমেয়াদে হার্টের সমস্যার কারণ হতে পারে। ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় – শরীরের ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণ ব্যাহত হয়, ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে – কম ঘুমের ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যা ক্ষুধা বাড়িয়ে দেয়। স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের সমস্যা হয় – মস্তিষ্ক ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, ফলে ভুলে যাওয়া বা মনোযোগের ঘাটতি দেখা দেয়।
মানসিক ক্ষতিঃ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বেড়ে যায় – কম ঘুমের কারণে কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) বেড়ে যেতে পারে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় – হতাশা, রাগ, বা বিরক্তিভাব দেখা দিতে পারে। ডিপ্রেশন বা হতাশার ঝুঁকি বাড়ে – দীর্ঘমেয়াদী অনিদ্রা মানসিক স্বাস্থ্যকে নষ্ট করতে পারে। সৃজনশীলতা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কমে যায় – ঘুম কম হলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।
দৈনন্দিন জীবনে প্রভাবঃ কাজের দক্ষতা কমে যায় – কর্মক্ষেত্রে বা পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়। দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে – ঘুম কম হলে গাড়ি চালানো বা যন্ত্রপাতি ব্যবহারের সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে – ঘুমের অভাব মেজাজ খারাপ করে দিতে পারে, ফলে অন্যদের সাথে খারাপ ব্যবহার হতে পারে।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ঘুমানোর আগে ক্যাফেইন ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস এড়িয়ে চলুন। শারীরিক ব্যায়াম করুন, তবে ঘুমানোর ঠিক আগে নয়। রাতে ঘুমানোর জন্য একটি শান্ত ও অন্ধকার পরিবেশ তৈরি করুন।
কি খেলে রাতে সহজে ঘুম আসে না
রাতে সহজে ঘুম না আসার পেছনে কিছু খাবারের বড় ভূমিকা থাকতে পারে। সাধারণত, যেসব খাবার স্নায়ুকে উত্তেজিত করে বা হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে, সেগুলো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
যেসব খাবার ঘুমের সমস্যা বাড়াতে পারেঃ ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় – কফি, চা, এনার্জি ড্রিংকস, সফট ড্রিংকস। চকোলেট – বিশেষ করে ডার্ক চকোলেটে ক্যাফেইন থাকে। মশলাদার খাবার – পেট গরম করে ও অ্যাসিডিটি বাড়িয়ে ঘুম নষ্ট করতে পারে । তেল-চর্বিযুক্ত খাবার – হজমে সমস্যা করে, যা রাতে অস্বস্তি সৃষ্টি করে । প্রোটিনসমৃদ্ধ ভারী খাবার – বেশি পরিমাণে মাংস বা ডাল জাতীয় খাবার রাতে হজম হতে সময় নেয় । অ্যালকোহল – যদিও এটি প্রথমে ঘুম আনতে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু পরে গভীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটায়। সুগারযুক্ত খাবার ও ডেজার্ট – রক্তে শর্করার ওঠানামার কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে ।
রাতে ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া, ঘুমানোর আগে গরম দুধ বা হারবাল চা পান করা, মোবাইল ও অন্যান্য স্ক্রিন থেকে দূরে থাকা, আপনার ঘুমের সমস্যা থাকলে এগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন।
দিনে ঘুমানো কি স্বাস্থ্যসম্মত
দিনে ঘুমানো স্বাস্থ্যসম্মত হতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে ঘুমের সময় ও পরিমাণের ওপর। দিনে ঘুমানোর উপকারিতাঃ শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি – দুপুরে ২০-৩০ মিনিটের ছোট্ট ঘুম (পাওয়ার ন্যাপ) ক্লান্তি কমায় ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি – গবেষণায় দেখা গেছে, সংক্ষিপ্ত ঘুম স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ উন্নত করে। হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো – মাঝেমধ্যে দুপুরে ঘুমানো হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে। মুড ভালো রাখা – পর্যাপ্ত বিশ্রাম মানসিক চাপ কমাতে ও মুড ভালো রাখতে সাহায্য করে।
দিনে বেশি ঘুমানোর ক্ষতিকর দিকঃ রাতে ঘুমের ব্যাঘাত – যদি দিনের ঘুম অনেক বেশি লম্বা হয় (১ ঘণ্টার বেশি), তাহলে রাতে ঠিকমতো ঘুম আসতে দেরি হতে পারে। অলসতা ও ঝিমুনি – দীর্ঘ সময় ধরে ঘুমালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছুক্ষণ ঝিমুনি ও বিভ্রান্তি হতে পারে। বডি ক্লকের সমস্যা – অনিয়মিত দিনে ঘুমানো শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের ছন্দকে ব্যাহত করতে পারে।
সঠিক উপায়ে দিনে ঘুমানোর নিয়মঃ
২০-৩০ মিনিটের বেশি না ঘুমানো – এটাকে ‘পাওয়ার ন্যাপ’ বলা হয় এবং এটি সবচেয়ে উপকারী।বিকেলের পর না ঘুমানো – দুপুর ৩টার পর ঘুমালে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে। শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমানো – যেন ঘুম গভীর হয় এবং দ্রুত সতেজ বোধ করা যায়। যদি রাতে ভালো ঘুম না হয় বা আপনি খুব ক্লান্ত বোধ করেন, তাহলে দিনের ছোট্ট বিশ্রাম নেওয়া উপকারী হতে পারে। তবে দীর্ঘ সময় ধরে দিনে ঘুমানো এড়িয়ে চলাই ভালো।
রাতে ঘুম না আসলে যেসব দু'আ পড়তে হয়
রাতে ঘুম না আসলে কিছু নির্দিষ্ট দু'আ ও আমল রয়েছে, যা পড়লে ইনশাআল্লাহ শান্তি ও ঘুম আসবে।
১. আয়াতুল কুরসিঃ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ... (সুরা আল-বাকারাহ ২:২৫৫)ঃ এটি পড়লে শয়তান দূরে থাকে এবং মন শান্ত হয়।
২. সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাসঃ এই তিনটি সূরা তিনবার করে পড়ে শরীর ও মনকে আল্লাহর কাছে সঁপে দিলে ঘুম ভালো হয়।
৩. হাদিসে বর্ণিত দু'আঃ اللهم غَارَتِ النُّجُومُ وَهَدَأَتِ العُيُونُ وَأَنْتَ حَيٌّ قَيُّومٌ، لا تَأْخُذُكَ سِنَةٌ وَلا نَوْمٌ، يَا حَيُّ يَا قَيُّومُ أَهْدِئْ لَيْلِي وَأَنِمْ عَيْنِي
উচ্চারণঃ "আল্লাহুম্মা গারাতিন নুজুম, ওয়া হাদা’তিল উয়ূন, ওয়া আন্তা হাইয়ুন কাইয়্যূম, লা তা’খুজুহু সিনাতুন ওয়ালা নাওম। ইয়া হাইয়ু ইয়া কাইয়্যূমু আহদি লায়লি ওয়া আনিম আইনী।"
অর্থঃ "হে আল্লাহ! তারা-নক্ষত্র বিলীন হয়ে গেছে, দৃষ্টিসমূহ প্রশান্ত হয়েছে, আর আপনি চিরঞ্জীব ও সর্বদা বিদ্যমান। আপনাকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করে না। হে চিরঞ্জীব, হে চিরস্থায়ী সত্তা! আমার রাত প্রশান্ত করুন এবং আমার চোখকে ঘুম দান করুন।"
৪. সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবারঃ ঘুমানোর আগে ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার পড়া উত্তম। এটি হাদিসে বর্ণিত।
৫. ঘুম না এলে ৭ বার এই দু'আঃ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي
অর্থ: “হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, হেদায়েত দিন, সুস্থতা দান করুন এবং রিযিক দিন।”এই দোয়াগুলো পড়লে মন শান্ত হবে, দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং ইনশাআল্লাহ ঘুম চলে আসবে।
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর জন্য কিছু কার্যকরী পদ্ধতি
১. নিয়মিত ঘুমের রুটিন তৈরি করুনঃ প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং জাগা অভ্যাস করুন। এটি আপনার শরীরের বায়োলজিক্যাল ক্লক ঠিক রাখতে সাহায্য করবে।
২. স্ক্রিন টাইম কমানঃ মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভির স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মস্তিষ্ককে জাগিয়ে রাখে। ঘুমানোর অন্তত ৩০-৬০ মিনিট আগে এগুলো বন্ধ করে দিন।
৩. শরীরকে শিথিল করুনঃ ঘুমানোর আগে ধীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম, মেডিটেশন বা হালকা স্ট্রেচিং করলে দ্রুত ঘুম আসবে।
আরো পড়ুনঃ
৪. হালকা খাবার খানঃ ঘুমানোর আগে বেশি ভারী খাবার বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় (চা, কফি) এড়িয়ে চলুন। ক্যামোমাইল টি বা উষ্ণ দুধ খেতে পারেন।
৫. পরিবেশ আরামদায়ক করুনঃ ঘুমানোর ঘর শান্ত, অন্ধকার ও শীতল রাখুন। আরামদায়ক বিছানা ও বালিশ ব্যবহার করুন।
৬. বই পড়ার অভ্যাস করুনঃ হালকা ও শান্তিময় বই পড়লে ঘুম দ্রুত আসতে পারে।
৭. একটি নির্দিষ্ট রিল্যাক্সিং রুটিন তৈরি করুনঃ ঘুমানোর আগে প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু কাজ করুন, যেমন: মৃদু সংগীত শোনা, গরম পানি দিয়ে গোসল করা বা আরামদায়ক সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৮. মোবাইল দূরে রাখুনঃ ঘুমানোর সময় মোবাইল ফোন দূরে রাখলে মস্তিষ্ক দ্রুত বিশ্রাম নিতে পারে।এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে দ্রুত এবং গভীর ঘুম পেতে পারেন।
এক মিনিটে ঘুম আসার উপায়
এক মিনিটে ঘুম আসার জন্য কিছু কার্যকর কৌশল চেষ্টা করতে পারেনঃ
১। 4-7-8 শ্বাস-প্রশ্বাস পদ্ধতিঃ এটি একটি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি যা দ্রুত মন ও শরীরকে শিথিল করে:
৪ সেকেন্ড নাক দিয়ে শ্বাস নিন, ৭ সেকেন্ড শ্বাস ধরে রাখুন, ৮ সেকেন্ড ধীরে ধীরে মুখ দিয়ে শ্বাস ছাড়ুন।
এটি ৩-৪ বার করুন, এতে মস্তিষ্ক দ্রুত শিথিল হবে।
৩। ঘর অন্ধকার এবং ঠান্ডা রাখুনঃ অতিরিক্ত আলো বন্ধ করুন এবং তাপমাত্রা কমান (প্রায় ১৮-২২°C)।
৪। চোখ বন্ধ করে শান্ত কোনো দৃশ্য কল্পনা করুনঃ যেমন, সমুদ্রের ঢেউ, বৃষ্টির শব্দ বা পাহাড়ি দৃশ্য ভাবতে পারেন।
৫। বিছানায় মোবাইল বা স্ক্রিন ব্যবহার এড়িয়ে চলুন। নীল আলো মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে, যা ঘুম বাধাগ্রস্ত করে।এগুলি চেষ্টা করলে দ্রুত ঘুম আসতে পারে।
আমাদের শেষ বক্তব্য
তাড়াতাড়ি ঘুমানোর সহজ পদ্ধতি অনুসরণ করলে মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। নিয়মিত ঘুমের রুটিন মেনে চলা, মোবাইল ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের ব্যবহার কমানো, হালকা ব্যায়াম করা এবং শান্ত ও অন্ধকার পরিবেশ তৈরি করা দ্রুত ঘুম আসতে সহায়ক।
পাশাপাশি, ক্যাফেইন ও ভারী খাবার পরিহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। এসব অভ্যাস গড়ে তুললে অনিদ্রার সমস্যা কমবে এবং ঘুমের গুণগত মান উন্নত হবে। এতক্ষন আমাদের এই আর্টিকেল পুরাপুরি অধান করার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আরো নতুন নতুন কন্টেন্ট পেতে হলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করেন তাহলে অনেক বিষয় বিস্তারিত জানতে পারবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url