ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা: আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত

 ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা : আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত


বর্তমান বিশ্বে ডিজিটাল ব্যাংকিং একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে। প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থাও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিজেদের সেবা প্রদান করছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি দেশে ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকিং সেবার অগ্রদূত হিসেবে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে, যা আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

এই প্রবন্ধে আমরা ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাসমূহ, এর কার্যকারিতা, সুবিধা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করব। আপনি ইসলামী ব্যাংক সমন্ধে যদি জানতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অধ্যয়ন করুন। তাহলে ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

 পোস্ট সূচিপত্রঃ  ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা: আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত
  ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা: আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত
ডিজিটাল ব্যাংকিং কি
ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাসমূহ
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা
ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের চ্যালেঞ্জ
ডিজিটাল ব্যাংকিং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
আমাদের শেষ কথা

ডিজিটাল ব্যাংকিং কি

ডিজিটাল ব্যাংকিং হলো এমন একটি ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেখানে গ্রাহকরা ব্যাংকে না গিয়েই অনলাইনে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করতে পারেন। এতে সেলফিন, মোবাইল অ্যাপ, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এটিএম, ই-ওয়ালেট ও অন্যান্য প্রযুক্তিনির্ভর সেবার মাধ্যমে গ্রাহকদের ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ দেওয়া হয়।

আরো পড়ুনঃ

ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবায় আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনের মাধ্যমে ইসলামী শরিয়াহ অনুসারে ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পাদন করা হয়।

ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবাসমূহ

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (IBBPLC) তার গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। নিচে এসব সেবার বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল অ্যাপ এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো সেলফিন, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, এম ক্যাশ এটিএম সেবাম  সিআরএম সেবা,  ক্রেডিট কার্ড, পিওএস,  কিউআর কোডসহ ডিজিটাল ব্যাংকিং প্রোডাক্ট গুলো সম্প্রসারণ ও গ্রাহকদের জন্য আরো সহজতর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

১. ইন্টারনেট ব্যাংকিং (IBBL iBanking)

ইসলামী ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের জন্য iBanking নামে একটি আধুনিক ইন্টারনেট ব্যাংকিং সেবা চালু করেছে। এর মাধ্যমে গ্রাহকরা ঘরে বসেই নিম্নলিখিত কাজগুলো করতে পারেনঃ 

সেলফিনঃ সেলফিন ইসলামী ব্যাংকের একটা সম্পূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপ। সেলফিনের মাধ্যমে ফান্ড ট্রান্সফার, মোবাইল টপআপ, টিকিট ক্রয়, ক্যাশ উত্তোলন, বিল পেমেন্ট, রেমিট্যান্স গ্রহণ, ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখা,   কার্ডের বিল পেমেন্ট,  এম ক্যাশ,  একাউন্ট ওপেনসহ বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল সেবা প্রদান করে থাকে। 

অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স চেক, ফান্ড ট্রান্সফার, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ,  মোবাইল রিচার্জ, অনলাইন কেনাকাটার জন্য পেমেন্ট, চেক বই অনুরোধ, স্টেটমেন্ট ডাউনলোড। 

২. আইবিএসএস (IBBL Smart App)ঃ  ইসলামী ব্যাংক IBBL Smart নামে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে, যা গ্রাহকদের জন্য আরও সহজ এবং দ্রুততর ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে: রিয়েল-টাইম ব্যালেন্স চেক, QR কোড পেমেন্ট, ফান্ড ট্রান্সফার, টিডিআর খোলা, ইনভেস্টমেন্ট সেবা গ্রহণ,  ইলেকট্রনিক চেক ক্লিয়ারেন্স করা সম্ভব।

৩. সেলফ-সার্ভিস কিওস্কঃ ব্যাংকিং সেবাকে আরও গতিশীল করতে ইসলামী ব্যাংক সেলফ-সার্ভিস কিওস্ক চালু করেছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা তাদের বিভিন্ন ব্যাংকিং কার্যক্রম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করতে পারেন।

৪. ডিজিটাল পেমেন্ট সেবাঃ  বর্তমানে ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ইসলামী ব্যাংক ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা চালু করেছে, যার মাধ্যমে: বিকাশ, নগদ, রকেট-এর মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে টাকা পাঠানো,  ই-কমার্স পেমেন্ট, POS মেশিন ব্যবহার করে শপিং পেমেন্ট, সরকারি ও বেসরকারি বিল পরিশোধ।  

৫. ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার (EFT)ঃ গ্রাহকরা এখন EFT এর মাধ্যমে সহজেই অন্যান্য ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে অর্থ স্থানান্তর করতে পারেন।

৬. আই-সেকুরিটি ও সাইবার সুরক্ষাঃ ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইসলামী ব্যাংক অত্যাধুনিক সাইবার সিকিউরিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, যাতে গ্রাহকদের তথ্য সুরক্ষিত থাকে।

৭। বুথ রিলেটেড সার্ভিসঃ ক) বুথ ব্যাংকিং, উপ শাখা, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট, এটিএম সার্ভিস, সিআরএম সার্ভিস, অনলাইন সিডিএম, আইডিএম এবং সেবা ঘর সার্ভিসের মাধ্যমে আধুনিক ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে আসছে।

৮। কার্ড রিলেটেড সার্ভিসঃ ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড, ভিসা সিলভার ডেবিট কার্ড, ভিসা প্লাটিনাম ডেবিট কার্ড,  ডুয়েল কারেন্সি ডেবিট প্লাটিনাম কার্ড ক্রেডিট কার্ড/ খিদমাহ কার্ড, ভিসা খিদমাহ কার্ড, হজ / ওমরা কার্ড,  স্যালারি কার্ড,  ট্রাভেল কার্ড,  ভার্চুয়াল কার্ড ইত্যাদি কাডের মাধ্যমে ডিজিটাল সেবা প্রদান করে আসছে। 

৯। ই এফ টি/ আরটিজিএস সেবাঃ মোবাইল ব্যাংকিং,  ইসলামী ব্যাংক এম ক্যাশ, পয়েন্ট অফ সেল। ফোন ব্যাঙ্কিং, কল সেন্টার বা কন্টাক সেন্টার, এসএমএস ব্যাংকিং প্রভৃতি ডিজিটাল সেবা প্রদান করছে।

১০। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, আইপে সেইফ, অনলাইন ব্যাংকিং, ইসলামী ব্যাংক ক্যাশ বাই কোড,  সুইফট সার্ভিস, গ্রীন পিন, স্মার্ট পিন।

১১। এপ্লিকেশন রিলেটেড সার্ভিসঃ আই ডবি বি এল  আই স্মার্ট, আইবিবিএল সেলফিন, আইবিবিএল ক্যাশ, কিউ আর কোড মার্চেন্ট।

ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সুবিধা

ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা  গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধা নিয়ে এসেছে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. সময়, শ্রম ও খরচ সাশ্রয়ঃ  গ্রাহকরা ঘরে বসেই ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন, ফলে সময়, শ্রম ও পরিবহন খরচ বাঁচে।

২. ২৪/৭ সেবাঃ  ডিজিটাল ব্যাংকিংএর মাধ্যমে যেকোনো সময় ব্যাংকিং সেবা নেওয়া যায়, যা গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত সুবিধাজনক। প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা এবং সপ্তাহে সাত দিন সেবা প্রদান করা হয়।

৩. নিরাপদ লেনদেনঃ  উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ডিজিটাল ব্যাংকিং লেনদেনকে নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত করেছে।

৪. ক্যাশলেস লেনদেনঃ  ইলেকট্রনিক পেমেন্ট ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্যাশলেস সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ইসলামী ব্যাংক।

ডিজিটাল ব্যাংকিংএর চ্যালেঞ্জ

১. সাইবার সিকিউরিটি ঝুঁকিঃ  ডিজিটাল ব্যাংকিংএর মাধ্যমে সাইবার অপরাধের সম্ভাবনা বেড়েছে।

২. প্রযুক্তিগত জটিলতাঃ  সব গ্রাহক ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্ষম নন, তাই তাদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।

৩. ইন্টারনেট নির্ভরতাঃ  গ্রামীণ অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের অভাব ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।


৪. প্রতারণার আশঙ্কাঃ  অনলাইন ব্যাংকিং এ প্রতারণার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তাই ব্যাংকগুলোর উচিত গ্রাহকদের আরও সচেতন করা।

ডিজিটাল ব্যাংকিং এর ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা

ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং আশা করা যায়ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও নিরাপদ হবে। সম্ভাব্য কিছু উন্নয়ন নিচে দেওয়া হলঃ 

১. আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) ও মেশিন লার্নিং (ML)  ব্যবহারঃ বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে আরও উন্নত ব্যাংকিং সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

আরো পড়ুনঃ

২. ব্লকচেইন প্রযুক্তি সংযোজনঃ  ট্রান্সপারেন্সি বাড়াতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ব্যাংকিং লেনদেনকে আরও নিরাপদ করবে।

৩. গ্রামীণ অঞ্চলে ডিজিটাল ব্যাংকিং বিস্তার ঃ সবার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে ইসলামী ব্যাংক গ্রামীণ অঞ্চলে মোবাইল ব্যাংকিং ও এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা আরও সম্প্রসারিত করতে পারে।

আমাদের শেষ কথা

ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং ব্যবস্থা দেশের ব্যাংকিং খাতে এক নতুন বিপ্লব ঘটিয়েছে। প্রযুক্তির সহায়তায় ব্যাংকিং সেবাকে আরও সহজ, দ্রুত ও নিরাপদ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে, সাইবার নিরাপত্তা ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এই খাতকে আরও উন্নত করতে হবে।

ইসলামী ব্যাংকের ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা ভবিষ্যতে দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির হার বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এতক্ষন আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমরা নিয়মিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর এই ওয়েবসাইটে আরটিকের প্রকাশ করে থাকি। আরো নতুন নতুন বিষয় জানতে চাইলে আপনি আমাদের ওয়েবসাইটের সাথে থাকুন এবং নিয়মিত ভিজিট করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url