বোবায় ধরে কেন এবং সত্যিই কি বোবা বলে কিছু আছে
বোবায় ধরে কেন এবং সত্যিই কি বোবা বলে কিছু আছে
বোবায় ধরা এক ধরনের মানসিক সমস্যা। ইংরেজিতে এটাকে স্লিপ প্যারালাইসিস বলে। একজন ব্যক্তি ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার শরীরের কোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যখন নারাতে পারে না এবং মনে হয় তার শরীরের উপর কিছু পাথর চাপা দেওয়া আছে, কথা বলতে পারছে না এই অবস্থায় কে বোবায় ধরা বলে।
বোবায় ধরা কী, বোবায় কেন ধরে
বোবায় ধরা (Sleep Paralysis) হলো এক ধরণের ঘুমজনিত সমস্যা, যেখানে একজন ব্যক্তি জেগে উঠলেও শরীর নড়াচড়া করতে পারে না। এটি সাধারণত ঘুম থেকে জাগার সময় বা ঘুমানোর সময় ঘটে এবং কিছুক্ষণের জন্য স্থায়ী হয়। অনেক সময় এটি ভীতিকর অভিজ্ঞতা হতে পারে, কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি শ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব করতে পারে এবং অলৌকিক কিছুর উপস্থিতি অনুভব করতে পারেন।
বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যায় বোবায় ধরা আসলে ঘুমের REM (Rapid Eye Movement) পর্যায়ের একটি ব্যাধি। সাধারণ কারণগুলো হলোঃ
১। অনিয়মিত ঘুমের অভ্যাস – পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুমের অভাব এই সমস্যার অন্যতম কারণ।
২। অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা – দুশ্চিন্তা বা হতাশা ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
৩। ঘুমের ভঙ্গি – পিঠের দিকে শুয়ে ঘুমালে বোবায় ধরার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
আরো পড়ুনঃ
৪। ঘুমের ব্যাঘাত – ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া বা অনিয়মিত সময় ঘুমানো।
৫। নারকোলেপসি বা অন্যান্য ঘুমজনিত ব্যাধি – এটি একটি বিশেষ ধরনের ঘুমের সমস্যা, যেখানে ব্যক্তি অনিয়ন্ত্রিতভাবে ঘুমিয়ে পড়েন।
৬। অ্যালকোহল বা ওষুধের প্রভাব – কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ বা মাদকদ্রব্য গ্রহণের ফলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
বোবায় ধরার লক্ষণ গুলি কি
বোবায় ধরা কিছু লক্ষণ:
১. দেহ কেন আছে নড়াচড়া করতে না পারাঃ জেগে উঠলেও শরীর সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে অবশ হয়ে যায়।
২। কথা বলতে কষ্ট হওয়া: অনেক সময় চিৎকার করতে চাইলেও মুখ দিয়ে শব্দ বের হয় না।
৩। বুকের ওপর চাপ অনুভূত হওয়া: মনে হয় যেন কেউ চেপে ধরেছে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
৪। ভূতের উপস্থিতি বা ছায়ামূর্তি দেখাঃ অনেকে অন্ধকার ছায়া, ভয়ঙ্কর মুখ, বা অদৃশ্য কোনো অস্তিত্ব অনুভব করে।
৫। ভয়ের অনুভূতিঃ প্রচণ্ড ভয়, দুঃস্বপ্নের মতো অনুভূতি হয়, মনে হয় যেন কেউ আক্রমণ করতে আসছে।
৬। আওয়াজ শোনাঃ কেউ নাম ধরে ডাকছে, ফিসফিস করা, বা দরজায় ধাক্কা দেওয়ার মতো অদ্ভুত শব্দ শোনা যেতে পারে।
৭। শ্বাস প্রস্বাস নিতে কষ্ট হওয়া – মনে হয় যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা কেউ শ্বাস আটকে দিচ্ছে।
৮। কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট স্থায়ী হয় – সাধারণত ২০-৩০ সেকেন্ড থেকে ২-৩ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
এটি মূলত ঘুমের সমস্যা এবং বিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। এটি ক্ষতিকর নয়, তবে ঘুমের অভ্যাস ভালো করলে সমস্যা কমে যেতে পারে।
বোবায় ধরা থেকে বাচার উপায়
১। নিয়মিত নিদ্রার পরিবেশ গড়ে তুলুনঃ প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং জাগার অভ্যাস করুন।
২। ডান পাশ ফিরে ঘুমানঃ গবেষণায় দেখা গেছে, পাশ ফিরে ঘুমালে বোবায় ধরার সম্ভাবনা কমে।
৩। মানসিক চাপ কমানো: মেডিটেশন, ব্যায়াম এবং শিথিলকরণ কৌশল (Relaxation Techniques) ব্যবহার করুন।
৪। ঘুমের পরিবেশ ঠিক করুনঃ অন্ধকার, শান্ত ও আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন।
৫। অতিরিক্ত নেশা জাতীয় জিনিস এড়িয়ে চলুনঃ এগুলো ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
৬। ধর্মীয় দিকঃ আপনি যদি মনে করেন, বোবায় ধরা নৈতিক বা আধ্যাত্মিক কারণেও হতে পারে। এক্ষেত্রে প্রার্থনা, ধর্মীয় পাঠ বা সুরা-দোয়া পাঠ করলে মানসিকভাবে স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে।
৭। ডাক্তারের পরামর্শ নিনঃ যদি বোবায় ধরা খুব বেশি হয় এবং আপনার দৈনন্দিন জীবনে সমস্যা সৃষ্টি করে, তবে একজন নিউরোলজিস্ট বা স্লিপ স্পেশালিস্টের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
বোবায় ধরা সাধারণত ক্ষতিকারক নয়, তবে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আপনার ঘুমের অভ্যাস ও মানসিক সুস্থতার দিকে নজর রাখলে এটি কমে যেতে পারে।
ঘুমের মধ্যে বোবায় ধরলে যা করবেন
ঘুমের মধ্যে "বোবা ধরা" (স্লিপ প্যারালাইসিস) হলে এটি খুব ভীতিকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। তবে এটি শারীরিকভাবে ক্ষতিকর নয় এবং সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের মধ্যে কেটে যায়। এই অবস্থায় করণীয় কিছু বিষয়ঃ
১. আতঙ্কিত হবেন নাঃ বোবা ধরলে অনেকেই ভয় পেয়ে যান, কিন্তু এটি কোনো অশরীরী কিছুর কারণে হয় না। এটি মূলত ঘুমের চক্রের একটি ব্যাঘাত। নিজেকে বারবার বলুন, "এটি স্বাভাবিক, কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।"
২. শরীরের ছোট কোনো অংশ নাড়ানোর চেষ্টা করুনঃ সম্পূর্ণ শরীর নাড়িয়ে ওঠা কঠিন হতে পারে, তাই আঙুল, পায়ের আঙুল, চোখের পাতা বা জিভ নাড়ানোর চেষ্টা করুন। এতে প্যারালাইসিস দ্রুত কেটে যাবে।
৩. শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুনঃ গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করুন, যদিও মনে হবে আপনি দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছেন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস নিন এবং মুখ দিয়ে ছাড়ুন।
৪. চোখ বন্ধ রেখে স্বাভাবিক কিছু কল্পনা করুনঃ আতঙ্কজনক কিছু চিন্তা না করে, প্রিয় কোনো জায়গা বা ব্যক্তির কথা ভাবার চেষ্টা করুন।
৫. নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস তৈরি করুনঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান (প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৭-৯ ঘণ্টা)। রাতে একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং সকালে একই সময়ে উঠুন। ঘুমানোর আগে মোবাইল বা টিভি দেখা কমান।
৬. একপাশে কাত হয়ে ঘুমানঃ চিত হয়ে (পিঠের ওপর) ঘুমালে বোবা ধরার আশঙ্কা বেশি থাকে, তাই পাশ ফিরে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। ডান কাতে শুয়া সুন্নাত।
৭. স্ট্রেস ও দুশ্চিন্তা কমানঃ মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বোবা ধরার কারণ হতে পারে। তাই মেডিটেশন, ব্যায়াম ও রিলাক্সেশন টেকনিক ব্যবহার করতে পারেন।
যদি বোবা ধরা খুব ঘন ঘন হয় এবং ঘুমের সমস্যা বাড়তে থাকে, তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
বোবায় ধরা কি জিনের প্রভাব
বোবায় ধরা (স্লিপ প্যারালাইসিস) সাধারণত একটি বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যাযোগ্য ঘুমজনিত সমস্যা, যা মূলত আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীরের মধ্যে সাময়িক অসঙ্গতির কারণে ঘটে। তবে অনেক সংস্কৃতি এবং লোককাহিনীতে এটি জিন, ভূত বা অদৃশ্য শক্তির প্রভাব হিসেবে বর্ণিত হয়।
লোককাহিনি ও বিশ্বাস: বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশে বিশ্বাস করা হয়, বোবায় ধরা জিন, ভূত বা অপদেবতার কারণে হয়। কিছু মানুষ মনে করেন, কোনো অশুভ আত্মা বা জিন তাদের দখল নিচ্ছে, তাই তারা নড়াচড়া করতে পারছেন না।
বিশেষ করে রাতে একা ঘুমালে, ক্লান্তি থাকলে, বা অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে বোবায় ধরার ঘটনা বেশি ঘটে, যা এই বিশ্বাসকে আরও শক্তিশালী করেছে। অর্থাৎ, বোবায় ধরা আসলে কোনো জিন বা অশরীরী আত্মার প্রভাব নয়, বরং এটি একটি সাধারণ ঘুমজনিত সমস্যা, যা বিজ্ঞান দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায়।
বোবা ধরা সম্পর্কে ইসলাম কি বলে
ইসলামে বোবায় ধরা (Sleep Paralysis) সম্পর্কে সরাসরি কোনো উল্লেখ নেই, তবে অনেকে এটি জিন বা শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার ঘটনা বলে মনে করেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, এটি ঘুমের একটি স্বাভাবিক সমস্যা, যেখানে মস্তিষ্ক জেগে ওঠে কিন্তু শরীর তখনো নড়াচড়া করতে পারে না।ইসলামিক দৃষ্টিকোণঃ ১. আল্লাহর স্মরণ: বোবায় ধরা বা ভয় পেলে কুরআনের আয়াত ও দু'আ পড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, বিশেষ করে আয়াতুল কুরসি (সূরা আল-বাকারাহ ২:২৫৫), সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস ইত্যাদি।
২। রাতে দোয়া ও নিরাপত্তা: হাদিসে রাতে ঘুমানোর আগে "বিসমিল্লাহ" বলা, অজু করা এবং তিনবার সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ার কথা বলা হয়েছে (সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম)।
৩। শয়তানের কুমন্ত্রণা: কেউ কেউ মনে করেন, বোবায় ধরা শয়তানের কুমন্ত্রণা বা প্রভাব হতে পারে। তাই রাতে দু'আ-দরুদ পড়া এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখার কথা বলা হয়েছে।
করণীয়ঃ ঘুমানোর আগে অজু করে দোয়া পড়ে শুতে পারেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন বিছানায় ঘুমানো, নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা ।
সুতরাং, ইসলামিক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে উভয় দৃষ্টিকোণ থেকেই বোবায় ধরা ক্ষতিকর কিছু নয়, তবে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উত্তম।
বোবায় ধরা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা
বোবায় ধরা বা স্লিপ প্যারালাইসিস (Sleep Paralysis) হল এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘুম থেকে জাগার সময় বা ঘুমাতে যাওয়ার সময় ব্যক্তি সাময়িকভাবে নড়াচড়া করতে পারে না বা কথা বলতে পারে না। এটি সাধারণত কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং অনেক সময় এর সাথে ভীতিকর হ্যালুসিনেশনও (দৈত্য বা ছায়ামূর্তি দেখা, দম বন্ধ লাগা ইত্যাদি) থাকতে পারে।
বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাঃ ঘুমের একটি পর্যায় আছে যাকে REM (Rapid Eye Movement) Sleep বলে। এই পর্যায়ে আমাদের মস্তিষ্ক খুব সক্রিয় থাকে, কিন্তু শরীরের পেশিগুলো সাময়িকভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত (paralyzed) অবস্থায় থাকে যাতে আমরা স্বপ্নের সময় হাত-পা না নাড়াতে পারি।যখন কেউ REM sleep থেকে জাগ্রত হয় কিন্তু তার শরীর তখনো পক্ষাঘাতগ্রস্ত অবস্থায় থাকে, তখনই বোবায় ধরা অনুভূত হয়। এই সময়ে মস্তিষ্ক সচেতন থাকে, কিন্তু শরীর নড়তে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে মস্তিষ্ক আংশিকভাবে স্বপ্ন দেখা অবস্থা থেকে সম্পূর্ণ বাস্তবতায় ফিরে আসতে পারে না, যার ফলে বিভিন্ন হ্যালুসিনেশনও দেখা যায়।
বোবায় ধরার কারণঃ অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা, অনিয়মিত ঘুম বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব, পিঠের দিকে শুয়ে ঘুমানো , নারকোলেপসি (Narcolepsy) বা ঘুমের রোগ, অ্যালকোহল বা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধের প্রভাব ।
প্রতিরোধের উপায়: নিয়মিত ঘুমের সময় ঠিক রাখা, পর্যাপ্ত ও গভীর ঘুম নিশ্চিত করা, অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়ানো, পাশে কাত হয়ে ঘুমানোর অভ্যাস করা
বৈজ্ঞানিকভাবে এটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি ঘটনা, যা বিপজ্জনক নয়। তবে যদি এটি ঘন ঘন হতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বোবায় ধরলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন
বোবায় ধরার (স্লিপ প্যারালাইসিস) ক্ষেত্রে সাধারণত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন হয় না, কারণ এটি ক্ষতিকর নয় এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকভাবে চলে যায়। তবে নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিতঃ
বারবার বা দীর্ঘসময় ধরে হচ্ছেঃ যদি প্রায়ই বা দীর্ঘসময় ধরে বোবায় ধরে, তাহলে এটি কোনো ঘুমজনিত ব্যাধির (যেমন নারকোলেপসি) লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপের কারণে হচ্ছে । যদি বোবায় ধরা মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে বা উদ্বেগ বাড়িয়ে দেয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছেঃ যদি ঘুমের মান খারাপ হয়ে যায় বা ঘুমের সময় ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হয়, তাহলে স্লিপ স্পেশালিস্ট বা নিউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া দরকার। অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আছেঃ যেমন শ্বাসকষ্ট, হার্টের সমস্যা, বা অন্যান্য অস্বাভাবিক উপসর্গ থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত।আপনার বোবায় ধরা যদি সমস্যা সৃষ্টি করে, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
বোবায় ধরলে চিকিৎসা পদ্ধতি
বোবায় ধরা (স্লিপ প্যারালাইসিস) সাধারণত ক্ষতিকর নয়, তবে এটি ভীতিকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। এটি মূলত ঘুমের একটি সমস্যা যেখানে ব্যক্তি জেগে উঠলেও শরীর নড়াচড়া করতে পারে না। চিকিৎসা সাধারণত এর কারণের উপর নির্ভর করে।
চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়ঃ
১. জীবনধারায় পরিবর্তন: পর্যাপ্ত ঘুম: প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো জরুরি। নিয়মিত ঘুমের সময়: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো ও জাগা দরকার। চাপ ও দুশ্চিন্তা কমানো: মেডিটেশন, যোগব্যায়াম ও রিলাক্সেশন টেকনিক সাহায্য করতে পারে। ঘুমের সঠিক পরিবেশ: ঘর অন্ধকার, শান্ত ও আরামদায়ক হওয়া উচিত।
২. চিকিৎসা ও ওষুধঃ যদি এটি ঘন ঘন ঘটে এবং জীবনযাত্রায় প্রভাব ফেলে, তবে ডাক্তার দেখানো উচিত। কখনও কখনও অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট ওষুধ (যেমন SSRIs) ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে যদি এটি ঘুমের ব্যাধি বা উদ্বেগজনিত কারণে হয়। নারকোলেপসি বা অন্যান্য ঘুমের সমস্যা থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
৩. ঘুমের অবস্থান পরিবর্তনঃ সাধারণত চিত হয়ে ঘুমালে বোবায় ধরার আশঙ্কা বেশি থাকে, তাই পাশ ফিরে ঘুমানো ভালো।
৪. ঘুমের আগে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পরিহার করাঃ মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে বন্ধ করা উচিত, কারণ নীল আলো মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
যদি প্রতি সপ্তাহে বা ঘন ঘন বোবায় ধরে। যদি এটি অতিরিক্ত ভয় বা মানসিক চাপের কারণ হয়। যদি অন্য কোনো ঘুমের সমস্যা থাকে (যেমন অতিরিক্ত দিনের ঘুমঘুম ভাব, ঘুমের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, স্লিপ প্যারালাইসিস নিজে থেকেই ভালো হয়ে যায়। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা ও মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখলে এটি কমে যেতে পারে।
বোবা ধরলে হোমিও চিকিৎসা
বোবা ধরা হলে হোমিওপ্যাথিতে কিছু ওষুধ ব্যবহৃত হয় যা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক লক্ষণ অনুসারে নির্ধারণ করা হয়। নিচে কিছু সাধারণ হোমিও ওষুধ উল্লেখ করা হলোঃ
১. অপিয়াম যদি ভয় ও দুঃস্বপ্নের কারণে বোবা ধরে। ঘুমানোর সময় মনে হয় যেন শরীর ভারী হয়ে যাচ্ছে। ঘুম ভাঙার পরও সম্পূর্ণ সচেতন হতে সময় লাগে।
২. কাফিয়া ক্রুডা (Coffea Cruda 30)ঃ অতিরিক্ত মানসিক উত্তেজনা বা দুশ্চিন্তার কারণে বোবা ধরলে।রাতে সহজে ঘুম আসে না বা গভীর ঘুম হয় না।
আরো পড়ুনঃ
৩. নাক্স ভোমিকা )ঃ অতিরিক্ত কাজের চাপ, অনিদ্রা ও দুশ্চিন্তার ফলে বোবা ধরলে। যারা রাত জাগেন বা বেশি চা-কফি খান, তাদের জন্য কার্যকরী।
৪. আর্সেনিকাম অ্যালবাম )ঃ যদি বোবা ধরার সাথে শ্বাসকষ্ট বা দমবন্ধ ভাব হয়।রাতের দিকে ভয় লাগে এবং মনে হয় কেউ কাছে আছে।
৫. আকোনাইট )ঃ হঠাৎ ভয় বা আতঙ্কের কারণে বোবা ধরলে। যদি মনে হয় কেউ ধাওয়া করছে বা আশেপাশে কিছু অস্বাভাবিক ঘটছে।
কিছু অতিরিক্ত পরামর্শঃ নিয়মিত ঘুমানোর চেষ্টা করুন এবং ঘুমের রুটিন ঠিক রাখুন। রাতের খাবার খুব ভারী না খাওয়া ভালো। অতিরিক্ত মানসিক চাপ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। আপনার যদি ঘন ঘন বোবা ধরার সমস্যা হয়, তাহলে কোনো হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
আমাদের শেষ কথা
বোবা ধরা আসলে কোনো অতিপ্রাকৃত ঘটনা নয়। এটি আমাদের ঘুমের চক্রের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি বৈজ্ঞানিক ঘটনা। মানসিক চাপ, অনিয়মিত ঘুম এবং অতিরিক্ত ক্লান্তি এটি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। সঠিক ঘুমের রুটিন অনুসরণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করলে এই সমস্যার সম্ভাবনা কমে আসে। যদি এটি ঘন ঘন ঘটে এবং দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
এতক্ষন আমি বোবায় ধরা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পাঠ করলে আপনি এ বিষয়ে জানতে পারবেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। বিভিন্ন বিষয়ে আমরা নতুন নতুন প্রবন্ধ পাবলিশ করি। আপনি আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করলে এইসব প্রবন্ধ গুলি দেখতে পাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url