বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণ এবং কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়
বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণ এবং কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়
শব্দ দূষণের কারণ ও প্রতিকার সম্বন্ধে আমরা অনেকেই জানিনা। এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে আপনি শব্দ দূষণের কারণ উৎস প্রতিরোধের উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। চলুন আমরা দেরি না করে এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করি।
আজকের আর্টিকেলটি আপনার আমার সবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একজন নাগরিক হিসাবে প্রত্যেকেরই যারা প্রয়োজন রয়েছে । কারণ শব্দ দূষণ আমাদের সমাজে ও পরিবেশে বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করছে।
পেজ সূচিপত্রঃ বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণ এবং কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়
বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণ এবং কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়
শব্দ দূষণের সংজ্ঞা ও শব্দ দূষণের উৎস
বাংলাদেশের শব্দ দূষণের প্রধান কারণ
শব্দ দূষণের প্রভাব ও ক্ষতিকর দিক
শব্দ দূষণের কারণে যেসব রোগ হয়
বাংলাদেশের শব্দ দূষণ বিধিমালা ২০০৬
শব্দ দূষণের জন্য অভিযোগ করার নিয়ম
বাংলাদেশে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ১০টি উপায়
আমাদের শেষ বক্তব্য
বাংলাদেশে শব্দ দূষণের কারণ এবং কিভাবে এর প্রতিকার করা যায়
শব্দ দূষণ আধুনিক বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরিবেশগত সমস্যা। বাংলাদেশে এটি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে। অতিরিক্ত শব্দ মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই প্রবন্ধে শব্দ দূষণের প্রধান কারণ ও প্রতিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
শব্দ দূষণের সংজ্ঞা ও শব্দ দূষণের উৎস
শব্দ দূষণের সংজ্ঞাঃ শব্দ দূষণ হলো অবাঞ্ছিত, অবিরাম বা উচ্চ মাত্রার শব্দ যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটায় এবং শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। সাধারণত ৭০ ডেসিবেল (dB) মাত্রার উপরে শব্দ মানুষের জন্য বিরক্তিকর ও ক্ষতিকর হতে পারে এবং ৮৫ ডেসিবেলের বেশি হলে তা দীর্ঘমেয়াদে শ্রবণশক্তির ক্ষতি করতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
শব্দ দূষণের উৎসঃ শব্দ দূষণ এমন একটি পরিবেশগত সমস্যা যা মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এটি বিভিন্ন উৎস থেকে সৃষ্টি হতে পারে। প্রধান উৎসগুলো হলো:
১. যানবাহনের শব্দঃ বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, রিকশার হর্ন, ট্রেন ও বিমানের শব্দ, রাস্তার যানজট ।
২. শিল্প ও কলকারখানাঃ ভারী মেশিন, জেনারেটর, কারখানার সাইরেন, নির্মাণকাজের আওয়াজ (ড্রিলিং, কাটিং, পাইলিং) ।
৩. ধ্বনিবর্ধক যন্ত্রপাতিঃ লাউডস্পিকার, মাইক, উচ্চশব্দে বাজানো গান, সিনেমা হল, স্টেডিয়াম, পার্টি বা বিয়ের অনুষ্ঠান।
৪. গৃহস্থালি ও অফিসের শব্দঃ টেলিভিশন, রেডিও, মাইক্রোওয়েভ ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কল-কারখানার ফোনের রিংটোন, প্রিন্টার ও টাইপিং ।
৫. প্রাকৃতিক উৎসঃ বজ্রপাত, ঝড়, ভূমিকম্পের শব্দ, সাগরের গর্জন, বন্যপ্রাণীদের ডাক।
শব্দ দূষণ হলো অনাকাঙ্ক্ষিত, উচ্চমাত্রার এবং বিরক্তিকর শব্দ যা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার জন্য ক্ষতিকর। সাধারণত ৭০ ডেসিবেল মাত্রার ওপরে শব্দ হলে তা ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়।
বাংলাদেশের শব্দ দূষণের প্রধান কারণ
১. যানবাহনের শব্দঃ বাংলাদেশে যানবাহনের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল, রিকশা ও প্রাইভেট কারের হর্ন এবং ইঞ্জিনের শব্দ শহরাঞ্চলে প্রধান শব্দ দূষণের কারণ।
২. নির্মাণকাজঃ বহুতল ভবন, সেতু, রাস্তা ইত্যাদির নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি যেমন ড্রিলিং মেশিন, ক্রেন, বুলডোজার ইত্যাদি উচ্চ মাত্রার শব্দ তৈরি করে।
৩. কলকারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানঃ বাংলাদেশের অনেক কারখানায় শব্দনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা নেই। টেক্সটাইল, ইস্পাত, সিমেন্ট, ট্যানারি ইত্যাদি শিল্পে ব্যবহৃত মেশিন থেকে প্রচুর শব্দ তৈরি হয়।
৪. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানঃ বিয়ে, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সভা ও কনসার্টে উচ্চ শব্দযুক্ত মাইক এবং ডিজে ব্যবহৃত হয়, যা সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত বিরক্তিকর।
৫. বিমান ও রেল চলাচলঃ বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় এবং ট্রেন স্টেশনগুলোর আশেপাশে শব্দ দূষণের মাত্রা বেশি থাকে।
৬. অনিয়ন্ত্রিত শব্দযন্ত্র ব্যবহারঃ ফুটপাতে লাউডস্পিকারের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার, উচ্চ ভলিউমে মিউজিক বাজানো, কারখানার সাইরেন ইত্যাদিও শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ।
শব্দ দূষণের প্রভাব ও ক্ষতিকর দিক
১. স্বাস্থ্যগত সমস্যাঃ ।উচ্চ মাত্রার শব্দ শ্রবণশক্তি হ্রাস, কানে বাজা, অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং মানসিক চাপের কারণ হতে পারে।
২. শিশুদের ওপর প্রভাবঃ শব্দ দূষণের ফলে শিশুদের মনোযোগ ব্যাহত হয়, যা তাদের শিক্ষার ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
৩. প্রাণী ও পরিবেশের ওপর প্রভাবঃ শব্দ দূষণ বন্যপ্রাণীদের স্বাভাবিক জীবনচক্র ব্যাহত করে। অনেক প্রাণী উচ্চ শব্দের কারণে বাসস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়।
শব্দ দূষণের ফলে মানুষের স্বাস্থ্যে ও পরিবেশে নানা ধরনের ক্ষতি হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ক্ষতি হলোঃ শারীরিক ক্ষতিঃ ১। শ্রবণশক্তি হ্রাস: দীর্ঘ সময় উচ্চমাত্রার শব্দে থাকলে কানের শ্রবণশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হতে পারে।
২। উচ্চ রক্তচাপ: অতিরিক্ত শব্দ হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
৩। ঘুমের ব্যাঘাত: শব্দ দূষণের কারণে পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ক্লান্তি, অবসাদ ও মনোযোগের অভাব দেখা দেয়।
৪। মাথাব্যথা ও স্ট্রেস: উচ্চ শব্দের কারণে মাথাব্যথা, মানসিক চাপ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
মানসিক ও সামাজিক ক্ষতিঃ১। মনোযোগের অভাব: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে উচ্চ শব্দ একাগ্রতা নষ্ট করে এবং কাজের দক্ষতা কমিয়ে দেয়।
২। বিরক্তি ও রাগ: দীর্ঘমেয়াদে শব্দ দূষণ মানুষকে বিরক্ত ও অতিরিক্ত রাগান্বিত করে তোলে, যা সামাজিক অস্থিরতা বাড়ায়।
৩। মানসিক রোগ: দীর্ঘ সময় শব্দ দূষণের মধ্যে থাকলে উদ্বেগ, বিষণ্নতা ও স্নায়ুর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।
পরিবেশগত ক্ষতিঃ ১। বন্যপ্রাণীর ওপর প্রভাব: অতিরিক্ত শব্দ বন্যপ্রাণীদের আচরণ পরিবর্তন করে, তাদের খাদ্য সংগ্রহ ও বংশবৃদ্ধির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
২। শিশুদের বিকাশে বাধা: শব্দ দূষণ শিশুদের মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৩। শহরের বসবাস অনুপযোগী হওয়া: যানবাহন, কলকারখানা ও নির্মাণকাজের শব্দ শহরের পরিবেশকে বসবাসের জন্য অস্বস্তিকর করে তোলে। সুতরাং, শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই জরুরি, যাতে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব কমানো যায়।
শব্দ দূষণের কারণে যেসব রোগ হয়
শব্দ দূষণের কারণে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু রোগ ও সমস্যা হলো: ১. শ্রবণজনিত সমস্যা, কানে বাজা বা টিনিটাস (Tinnitus), শ্রবণশক্তি হ্রাস বা বধিরতা।
২. হৃদরোগ ও উচ্চ রক্তচাপঃ উচ্চ রক্তচাপ (Hypertension), হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা , হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি।
৩. মানসিক ও স্নায়বিক সমস্যাঃ ঘুমের ব্যাঘাত ও অনিদ্রা, দুশ্চিন্তা ও বিষণ্নতা, স্ট্রেস ও মাথা ব্যথা।
৪. শিশুদের বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিক বিকাশের সমস্যাঃ শেখার দক্ষতা হ্রাস, মনোযোগের ঘাটতি, আচরণগত সমস্যা।
৫. হজমজনিত সমস্যাঃ ক্ষুধামন্দা, পাকস্থলীতে গ্যাস ও আলসারের ঝুঁকি। দীর্ঘমেয়াদে শব্দ দূষণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে এবং বিভিন্ন জটিল রোগের কারণ হতে পারে। তাই শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের শব্দ দূষণ বিধিমালা ২০০৬
বাংলাদেশের শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ পরিবেশ সংরক্ষণ আইনের অধীনে প্রণীত একটি বিধিমালা, যার মূল উদ্দেশ্য হলো শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা এবং জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। এটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পরিবেশ অধিদপ্তর দ্বারা বাস্তবায়িত হয়।
মূল বিষয়বস্তু: ১. শব্দের মানমাত্রা: শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য পাঁচটি এলাকা নির্ধারণ করা হয়েছে:১। নীরব এলাকা (হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত এলাকা)। ২। আবাসিক এলাকা । ৩। মিশ্র এলাকা (আবাসিক ও বাণিজ্যিক)। ৪। বাণিজ্যিক এলাকা ।৫। শিল্প এলাকা প্রতিটি এলাকার জন্য দিনে ও রাতে অনুমোদিত শব্দের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
২. শব্দ উৎপাদনের নিয়ন্ত্রণ: যানবাহন, কলকারখানা, নির্মাণকাজ, উচ্চশব্দযুক্ত মাইক বা সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলতে হবে। রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত উচ্চশব্দে মাইক বাজানো বা যান্ত্রিক শব্দ তৈরি নিষিদ্ধ, বিশেষ অনুমতি ছাড়া।
৩. নিয়ন্ত্রণ ও শাস্তি: বিধিমালা লঙ্ঘন করলে জরিমানা বা শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী শব্দ দূষণ রোধে ব্যবস্থা নিতে পারে।
গুরুত্বপূর্ণ বিধানসমূহ: ১০০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ করা যাবে না। হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আদালত এলাকায় ৫০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ নিষিদ্ধ। অনুমোদিত মাত্রার বেশি শব্দ হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিতে পারে। এই বিধিমালার লক্ষ্য হলো নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও সুস্থ পরিবেশ নিশ্চিত করা এবং শব্দ দূষণজনিত ক্ষতি প্রতিরোধ করা।
শব্দ দূষণের জন্য অভিযোগ করার নিয়ম
বাংলাদেশে শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার জন্য কয়েকটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। নিচে ধাপে ধাপে নিয়ম দেওয়া হলো: স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ শব্দ দূষণ যদি কোনো এলাকা বা স্থানের কারণে হয় (যেমন—বিপণি বিতান, কলকারখানা, মাইক বা উচ্চস্বরে গান বাজানো), তাহলে সংশ্লিষ্ট থানায় বা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) অফিসে অভিযোগ করতে পারেন।
সরাসরি থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা যেতে পারে। পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ । বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুযায়ী শব্দ দূষণ একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। আপনি পরিবেশ অধিদপ্তরে লিখিত বা অনলাইন অভিযোগ করতে পারেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের হটলাইন: ১৬১০৮ । ওয়েবসাইট: www.doe.gov.bd
৩. সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভায় অভিযোগঃ যদি শব্দ দূষণ কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বা যানবাহনের কারণে হয়, তবে সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার সংশ্লিষ্ট বিভাগে অভিযোগ জানানো যেতে পারে।
৪. মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযোগঃ যদি তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা প্রয়োজন হয়, তবে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) অফিসে বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে অভিযোগ করলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হতে পারে।
৫. জাতীয় জরুরি সেবা (৯৯৯) ব্যবহারঃ তীব্র শব্দ দূষণের কারণে যদি জনদুর্ভোগ বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়, তবে ৯৯৯-এ কল করে সহায়তা চাইতে পারেন।
বাংলাদেশে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে ১০টি উপায়
বাংলাদেশে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর কিছু উপায় নিম্নে উল্লেখ করা হলো: ১। আইন প্রয়োগ করা – বাংলাদেশে বিদ্যমান শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
২। শিল্প ও নির্মাণকাজে নিয়ন্ত্রণ – কলকারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনে নির্ধারিত মাত্রার বাইরে শব্দ তৈরি রোধ করতে হবে।
৩। যানবাহনের শব্দ নিয়ন্ত্রণ – অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে, পুরোনো ও উচ্চ শব্দ উৎপাদনকারী যানবাহনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
৪ । নির্দিষ্ট এলাকায় নীরব জোন প্রতিষ্ঠা – হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা এবং অফিস চত্বরে ‘নীরব জোন’ ঘোষণা ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫। জনসচেতনতা বৃদ্ধি – শব্দ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে প্রচার চালিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে।
৬। সবুজ বেষ্টনী সৃষ্টি করা – শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করতে হবে, যা শব্দ শোষণ করে দূষণ কমাতে সাহায্য করবে।
৭। শব্দ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি ব্যবহার – কলকারখানা ও যানবাহনে সাউন্ডপ্রুফ প্রযুক্তি ও শব্দ শোষণকারী যন্ত্রাংশ ব্যবহার করতে হবে।
৮। প্রশিক্ষণ ও গবেষণা – শব্দ দূষণ কমানোর জন্য পরিবেশবিদ, প্রকৌশলী ও নগর পরিকল্পনাবিদদের গবেষণা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
৯। বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থার প্রচলন – ইলেকট্রিক যানবাহন, সাইকেল এবং জনপরিবহনের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে, যাতে কম শব্দ উৎপন্ন হয়।
১০ . জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা – স্থানীয় জনগণকে সচেতন করে তাদেরকে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ভূমিকা রাখতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
বাংলাদেশে শব্দ দূষণ প্রতিরোধে করণীয়
১। আইন প্রয়োগঃ বাংলাদেশে "শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬" কার্যকর রয়েছে। এই আইন আরও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা দরকার।
২. জনসচেতনতা বৃদ্ধিঃ মানুষকে শব্দ দূষণের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতন করতে স্কুল, কলেজ ও গণমাধ্যমে প্রচারণা চালানো দরকার।
৩. যানবাহনের নিয়ন্ত্রণঃ অপ্রয়োজনীয় হর্ন বাজানো বন্ধে কড়া আইন প্রয়োগ।
বৈদ্যুতিক যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান।
৪. নির্মাণকাজে নিয়মনীতি মানাঃ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ সীমাবদ্ধ রাখা। শব্দ শোষণকারী উপকরণ ব্যবহার।
৫. শিল্প কারখানায় শব্দ নিয়ন্ত্রণ ঃ কারখানায় শব্দনিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি সংযোজন। কর্মীদের জন্য কান রক্ষার ব্যবস্থা রাখা।
৬. বিমানবন্দর ও রেল স্টেশন এলাকায় ব্যবস্থা ঃ বিমান ও ট্রেনের শব্দনিয়ন্ত্রণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার।
বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায় সাউন্ড ব্যারিয়ার স্থাপন।
৭. মাইকের নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারঃ রাত ১০টার পর উচ্চ শব্দযুক্ত মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দ বজায় রাখা।
আমাদের শেষ বক্তব্য
বাংলাদেশে শব্দ দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা, যা জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সমস্যা সমাধানে সরকারি উদ্যোগ, আইন প্রয়োগ, প্রযুক্তির ব্যবহার এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধি অপরিহার্য। সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে শব্দ দূষণ হ্রাস করে বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব।
আমি এই প্রবন্ধে শব্দ দূষণের উপর বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এতক্ষণে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি শব্দ দূষণের কারণ প্রতিকার উৎস ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অধ্যায়ন করুন। আরো নতুন নতুন কনটেন্ট সম্বন্ধে জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন। আমরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখে এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে থাকি। আল্লাহ পাক সবাইকে ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url