ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা কি ও কেন
ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা কি ও কেন
ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা বর্তমান বিশ্বে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং জনগণের আস্থা-বিশ্বাসের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইসলামী ব্যাংক কি এবং কিভাবে এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় এ বিষয়ে আপনার মনে নানা প্রশ্ন জাগতে পারে।
তাই আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থার উপর আলোচনা করবো। আপনি জেনে খুশি হবেন যে, বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক একটি উন্নততর ব্যাংক ব্যবস্থা হিসাবে সারা পৃথিবীতে পরিচিতি লাভ করেছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি ও সফলতা লাভ করেছে। আপনি ওই আর্টিকেলটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত অধ্যয়ন করে ইসলামী ব্যাংক সম্বন্ধে ব্যাপক তথ্য জানতে পারবেন.
ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা কি ও কেন
ইসলামী ব্যাংকের সংজ্ঞা
ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম
ইসলামী ব্যাংকের মুল্ধন ও আয়ের উৎস
ইসলামী ব্যাংকের আমানত গ্রহণ নীতিমালা
ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ সঞ্চয়ী হিসাব সমূহঃ
ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ নীতিমালা
ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমুখী কিছু বিনিয়োগ প্রকল্প
আমাদের শেষ কথা
ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা কি ও কেন
ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যা সকল প্রকার কার্যক্রমে সুদ বর্জন করে ইসলামী শরিয়ার নীতিমালা মেনে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করে। ইসলামের আর্থ-সামাজিক মূলনীতির আলোকে একটি ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার তাগিদ থেকে ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে। তাই প্রচলিত ধারার ব্যাংক ব্যবস্থার সাথে এ ব্যাংকের পার্থক্য হলো আদর্শিক ও নীতিগত। ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থার কর্ম পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা ও স্বতন্ত্র । ইসলামী শরীয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত সকল লেনদেন সুদ মুক্ত। ইনসাফ ভিত্তিক মুনাফা অর্জন ইসলামী ব্যাংকের আর্থিক লেনদেনের মূল ভিত্তি ।
ইসলামী ব্যাংকের সংজ্ঞা
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ইসলামী ব্যাংক আবার কি? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় ইসলামী শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত ব্যাংকিং ব্যবস্থাকেই ইসলামী ব্যাংক বলে। ওআইসি কর্তৃক সংজ্ঞা অনুসারে বলা যায়, ইসলামী ব্যাংক হচ্ছে এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যার উদ্দেশ্য আইন-কানুন ও কর্মপদ্ধির সকল স্তরে ইসলামী শরীয়তের নীতিমালা মেনে চলতে এবং তার সকল কার্যক্রমে সুদের লেনদেন সম্পূর্ণ বন্ধ করতে বদ্ধপরিকর।
আরো পড়ুনঃ
অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংক ব্যবস্থা এমন একটি পদ্ধতি যা ইসলামের নীতি আদর্শ আইন কানুন মেনে ব্যাংক ব্যবস্থা পরিচালিত হয় এবং লেনদেনের সকল ক্ষেত্রে সুদকে সম্পূর্ণরূপে বর্জন করার অঙ্গীকার করা হয়।
ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ টিএমসি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদ মুক্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক। এই ব্যাংক ১৯৮৩ সালে একটি তফসিলভুক্ত হিসাবে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের লাইসেন্স প্রাপ্ত হয় এবং কার্যক্রম শুরু করে।
লক্ষ্যঃ
কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ধারার প্রবর্তক ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সাম্য, ইনসা ফ ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা, বহুমুখী বিনিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা বিশেষ করে দেশের অগ্রাধিকার খাত ও স্বল্পোন্নত এলাকায় ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন সাধন করা, স্বল্প আয় সম্পন্ন জনগোষ্ঠী মাঝে বিশেষ করে পল্লী অঞ্চলের জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও আর্থিক সেবা দানে উৎসাহ প্রদান করা ইসলামী ব্যাংকের লক্ষ্য।
উদ্দেশ্যঃ
১। ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠা উদ্দেশ্য হল সুনাম ও কর্মদক্ষতার মাধ্যমে নেতৃস্থানীয় ইসলামী ব্যাংক বিবেচনায় রেখে সর্বোৎকৃষ্ট আর্থিক কার্যক্রম অর্জনে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালানো।
২। আর্থিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা মাধ্যমে জবাবদিহিতা স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতার ভিত্তিতে আধুনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং পরিচর্যা করা, ইসলামে নীতিমালা অনুসারে আর্থিক ব্যবস্থায় সুস্থতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা এবং গভীরভাবে জনগণে কল্যাণে কর্মরত আত্মনিবেদিত পেশাজীবী সহ শক্তিশালী অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠা করে তোলা।
৩। প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের মাধ্যমে সঞ্চয়কে উৎসাহিত করা।
৪। বিনিয়োগকে বিশেষ করে অধিকতার ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রকল্পসমূহে বিনিয়োগ উৎসাহিত করা।
ইসলামী ব্যাংকের কার্যক্রম
ইসলামী ব্যাংক সাধারণত লিখিত ব্যাংকিং কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকেঃ
১।সকল ধরনের আমানত গ্রহণ।
২। বিনিয়োগ প্রদান।
৩। বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনা করা।
৪। অন্যান্য ব্যাংকিং সেবা প্রদান।
৫। সমাজ কল্যাণমূলক কাজ
এছাড়াও ইসলামী ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে সেবা ও জনকল্যাণমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে
ইসলামী ব্যাংকের আমানত গ্রহণ নীতিমালা
ইসলামী ব্যাংক বিভিন্ন হিসাব বা অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আমানত গ্রহণ করে। দুইটি নীতিতে ইসলামী ব্যাংক আমানত সংগ্রহ করেঃ
১। মুদারাবা নীতি (সঞ্চয়ী হিসাব)
২। আল ওয়াদিয়া নীতি ( চলতি হিসাব)
১। মুদারাবা নীতিঃ ইসলামী ব্যাংক মুদারাবা নীতিতে জমা গ্রহণ করে। মুদারাবা অর্থ অংশীদারী কারবার। এ কারবার একপক্ষ অর্থ যোগান দেয় এবং মুদারিব ব্যবসা পরিচালনা করে। এক্ষেত্রে আমানতকারীরা সাহেবালাল অর্থের যোগানদাতা এবং ব্যাংক মুদারিব বা উদ্যক্তা হিসাবে ব্যবসা পরিচালনা করে যে লাভ হয় তা চুক্তিভিত্তিক বন্টন করে। অর্থাৎ আমানতকারীঃব্যাংক=৬৫ঃ৩৫।
উল্লেখ্য প্রচলিত ব্যাংকের সঞ্চয় হিসেবে আমানতকারীর জমাকৃত টাকা সুদসহ সম্পূর্ণ পাওয়ার নিশ্চয়তা আছে। অন্যদিকে ইসলামী ব্যাংক মুদারাবার অর্থ দেওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না। লাভ লোকসান উভয়ই আমানতকারীকে বহন করতে হয়। ইসলামী শরিয়াহর মুদারাবা নীতির ভিত্তিতে ইসলামী ব্যাংকের হিসাবগুলি পরিচালিত হয়ঃ
এসব হিসাব পরিচালনার জন্য ব্যাংক মুদারিব এবং গ্রাহক সাহিব আল মাল হিসাবে বিবেচিত হন। ব্যাংক জমাকারির পক্ষে তার জমাকৃত অর্থ বিনিয়োগ করে এবং মুদারাবা তহবিল বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয়ের কমপক্ষে শতকরা ৬৫ ভাগ গ্রাহকের মাঝে বন্টন করা হয়।
১। মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব ২। মুদারাবা মেয়াদী জমা হিসাব ৩। মুদারাবা বিশেষ নোটিশ হিসাব ( এসএনডি) ৪। মুদারাবা হজ সঞ্চয়ী হিসাব ৫। মুদারাবা সেভিংস বন্ড ৬। মুদারাবা বিশেষ সঞ্চয় (পেনসন) হিসাব ৭। মুদারাবা মাসিক মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয় হিসাব ৮। মুদারাবা মোহর সঞ্চয়ী হিসাব ৯।মুদারাবা ওয়াক্ফ ক্যাশ ডিপোজিট একাউন্ট ১০। মুদারাবা বৈদেশিক মুদ্রা জমা হিসাব।
২। আল ওয়াদিয়া নীতিঃ আল ওয়াদা অর্থ সংরক্ষণ করা জমা করা বাদ দেয়া ও পরিত্যাগ করা ইত্যাদি। এটি একটি চুক্তি। একপক্ষ গ্রাহক টাকা জমা রাখে তাকে মুয়াদ্দি। অপর পক্ষ ব্যাংক জমা গ্রহন করে। একে মুয়াদা ইলাহী বলে । ইসলামী ব্যাংক ইসলামী শরিয়াহর আল ওয়াদিয়া নীতির ভিত্তিতে আল ওয়াদিয়া চলতি হিসাব পরিচালনা করে।
এই হিসাবে জমাকৃত অর্থ ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করে। অন্যদিকে ব্যাংক গ্রাহকের কাছ থেকে এই অনুমতি নেয় যে, ব্যাংক তার টাকা ব্যবহার করতে পারবে । এই হিসাবে গ্রাহক তার ইচ্ছামাফিক লেনদেন করতে পারে । এই হিসাবে কোন লাভ দেয়া হয় না কিংবা জামাকারীকে কোন লোকসান বহন করতে হয় না। শুধুমাত্র মূল টাকা ফেরত দেয়ার ওয়াদা করে।
ইসলামী ব্যাংকের বিশেষ সঞ্চয়ী হিসাব সমূহঃ
মুদারাবা হজ সঞ্চয় হিসাবঃ পবিত্র হজ্জ পালনে আগ্রহী ব্যক্তিগণ হজ্জ হিসাব গড়ে তুলে যথাসময়ে হজ্জ পালন করতে পারেন। নির্ধারিত মাসিক কিস্তিতে ২৫ বছর মেয়াদে জমা হিসাব গড়ে তোলা যায়। যারা হজের জন্য এককালীন টাকা জোগাড় করতে অপারগ, তারা এক বছর থেকে ২৫ বছর মেয়াদ এর মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে হজ্জের জন্য সঞ্চয় গড়ে তুলতে পারেন।
মুদারাবা বিশেষ সঞ্চয:( পেনসন) হিসাবঃ মুদারাবা বিশেষ সঞ্চয়ী হিসাবে ৫০০,১০০০,১৫০০,২৫০০ টাকা এবং ৫০০০ টাকা হারে মাসিক কিস্তিতে ৩ বছর, ৫ বছর বা ১০ বছর মেয়াদে জমা করা যায় । মেয়াদান্তে লাভ সহ এককালীন অথবা নির্ধারিত মাসিক কিস্তির ভিত্তিতে পেনশনের মত জমাকৃত টাকা উত্তোলন করা যায়। পিতা-মাতা বা আইন সম্মত অভিভাবক অপ্রাপ্ত বয়স্কের নামেও হিসাব করতে পারেন।
মুদারাবা সেভিংস বন্ডঃ যে কোন ব্যক্তি স্বনামে অথবা যুগ্ম নামে এবং অলাভজনক আর্থ সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নামে পাঁচ বছর কিংবা ৮ বছর মেয়াদে ১০০০ টাকা,৫০০০ টাকা, ১০০০০ টাকা, ২৫০০০ টাকা, ৫০ হাজার টাকা, ১ লক্ষ টাকা,পাঁচ লক্ষ টাকা, ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের মুদারাবা সঞ্চয় বন্ড ক্রয় করতে পারেন । নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেও এই বন্ড ভাঙানো যায় । এ বন্ড জামানত হিসাবেও ব্যবহার করা যায়।
মুদারাবা মাসিক মুনাফা ভিত্তিক সঞ্চয় হিসাবঃ এ হিসাবে যে কোন ব্যক্তি ন্যূনতম এক লক্ষ বা তার গুণিতক ব্যাংকের নির্ধারিত শাখা সমূহে পাঁচ বছরের জন্য এককালীন জমা রাখতে পারেন। যে তারিখে টাকা জমা করা হবে তার ৩০ দিন পর থেকে মাসিক ভিত্তিতে সাময়িক (প্রভিশনাল) হারে মুনাফা প্রদান করা হবে। বছর শেষে হিসাব চূড়ান্ত হওয়ার পর হিসাব সমন্বয় করা হবে।
মুদারাবা মোহর সঞ্চয় হিসাব : শরিয়াহর দৃষ্টিতে স্ত্রীদের অন্যতম অধিকার দেন মোহর স্বামীর উপর ফরজ। এ ফরজ আদায়ের সুযোগ সৃষ্টির জন্য মদারাবা মোহর সঞ্চয়ী হিসাব চালু করা হয়েছে। দেশের যেকোনো দায়িত্ববান বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রীর নামে ৫০০, ১০০০, ২০০০, ৩০০০ ও ৫০০০ টাকা মাসিক কিস্তিতে দশ বছর মেয়াদে এ হিসাব খুলতে পারেন।
মুদারাবা ওয়াক্ফ ক্যাশ ডিপোজিট একাউন্ট : ক্যাশ ওয়াক্ত হিসাবে ওয়াক্ফকৃত সমুদয় অর্থ এককালীন জমা করা যায় অথবা ক্যাশ ওয়াক্ফ এর মোট পরিমাণ ন্যূনতম টাকা ৫০ হাজার মাত্র জমা করে পরবর্তী সময়ে হাজার টাকা বা তার গনিতক অঙ্কে বাকি অর্থ কিস্তিতে জমা করা যায়। এ হিসাব থেকে অর্জিত মুনাফা হিসাবধারীর নির্দেশ অনুযায়ী সামাজিক ও মানবিক কল্যাণে ব্যয় করা হয়।
মুদারাবা বৈদেশিক মুদ্রা জমা হিসাব : ন্যূনতম ১০০০ মার্কিন ডলার জমা দিয়ে মোদারাবা বৈদেশি মুদ্রা জমা হিসাব খোলা যায়। বিদেশে বসবাসকারী কর্মরত উপার্জনক্ষম নাগরিক, বাংলাদেশে বসবাসকারী বিদেশী নাগরিক, বিদেশে নিবন্ধনকৃত ও বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি মিশন ও তাদের প্রবাসী কর্মচারীবৃন্দ এ হিসাব খুলতে পারেন। যারা হিসাব খুলবেন তাদেরকে বিধি মোতাবেক মুনাফা দেওয়া হবে।
ইসলামী ব্যাংকের তহবিলের উৎস :
ইসলামী ব্যাংক নিম্নলিখিত উৎসসমূহ হতে তহবিল সংগ্রহ করে
১। শেয়ার বিক্রয় থেকে
২। সঞ্চয়ী আমানত থেকে
৩। চলতি আমানত থেকে
৪। সাধারণ আমানত থেকে
ইসলামী ব্যাংকের আয়ের উৎস
১।বিনিয়োগ হতে মুনাফা
২।কমিশন ও সেবা মূল্য
৩। ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সেবা মূল্য
ইসলামী ব্যাংকের বিনিয়োগ নীতিমালা
ইসলামী ব্যাংকে বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগ নীতিমালা রয়েছে। সে সব নীতিমালার আলোকে বিনিয়োগ দেওয়া হয়। সেই বিনিয়োগ পদ্ধতিগুলি নিচে আলোচনা করা হলোঃ
বাই মুরাবাহা : কোন পণ্যের ক্রয় মূল্যের উপর ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ের সম্মতিতে নির্ধারিতলাভে বিক্রয় করাকে বাই মুরাবাহা বলে। এ পদ্ধতিতে ব্যাংক গ্রাহকের কাঙ্খিত মালামাল ক্রয় করে পরবর্তীতে তা ব্যাংক ও গ্রাহক উভয়ের সম্মতিতে ক্রয় মূল্যের উপর নির্ধারিত লাভ যোগ করে বিক্রয় করা হয়।
বাই মুয়াজ্জল: বাই মুয়াজ্বল বলতে ব্যাংক কর্তৃক লাভের উদ্দেশ্যে বিনিয়োগ গ্রাহকের নিকট বাকিতে মাল বিক্রয় করা বোঝায়। ব্যাংক মালামাল ক্রয় করে তারপর পণ্যটির মালিকানা নিশ্চিত হয়ে পণ্যটির বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে এবং চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে গ্রাহককে উক্ত মূল্যে পণ্য সরবরাহ করে। চুক্তিপত্রে মালামালের ধরন, গুনাগুন, পরিমাণ, বিক্রয় মূল্য, সরবরাহের স্থান ও সময় এবং গ্রাহক কর্তৃক মূল্যপরিশোধের সময়সীমা ও পদ্ধতি ইত্যাদি সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
বাই সালাম : বাই সালাম হলো এমন এক ব্যবসায়িক চুক্তি যার আওতায় ভবিষ্যতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পণ্য সরবরাহের শর্তে ব্যাংক মালের ক্রয় মূল্য অগ্রিম পরিশোধ করে এবং তা যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রয় করতে পারে।
বাই ইসতিসনা: বাই ইসতিসনা এমন এক চুক্তি যেখানে কোন শিল্প বা তৈরি পোশাক বা কোন কিছু নির্মাণ বা উৎপাদন বা প্রস্তুতকরণ করার আদেশ পায় এবং এই আদেশ অনুসারে পণ্যটি তৈরি করে সরবরাহ এবং বিক্রয় করা হয়।
মুদারাবা : মুদারাবা হলো একটি ব্যবসায়িক চুক্তি যা্র শর্ত অনুসারে একপক্ষ অর্থাৎ ব্যাংক মূলধন যোগান দেয় এবং অন্যপক্ষ অর্থাৎ উদ্যোক্তা তার দক্ষতা, প্রচেষ্টা, শ্রম, প্রয়োজনীয় ব্যবসায়িক প্রজ্ঞা নিয়োজিত করেন। ব্যাংক সাহিব আল মাল হিসাবে মূলধন যোগান দেয় এবং উদ্যোক্তা মুদারিব হিসাবে সে মূলধন ব্যবসায় খাটায়। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অর্জিত মুনাফা ব্যাংক ও উদ্যোক্তার মধ্যে ভাগাভাগি হয়। আর লোকসান হলে সম্পূর্ণ লোকসান সাহিব আল মাল বহন করবে।
মুশারাকা : মুশারাকা বলতে এমন এক ব্যবসায়িক চুক্তি বুঝায় যার শর্ত অনুসারে ব্যাংক মূলধনের একটি অংশ যোগান দেয় এবং অন্যপক্ষ বিনিয়োগ গ্রাহক বাকি অংশ যোগান দেয়। ব্যবসায় লাভ হলে ব্যাংক ও গ্রাহক চুক্তি অনুযায়ী ভাগ করে নেয় আর লোকসান হলে ব্যাংক ও গ্রাহক মূলধন অনুপাতে বহন করে নেয়।
হায়ার পারচেজ আন্ডার শিরকাতুল মিল্ক :
এই পদ্ধতিতে ব্যাংক ও গ্রাহক চুক্তির ভিত্তিতে যৌথভাবে যানবাহন, মেশিন ও যন্ত্রপাতী, ভবন, এপার্টমেেন্ট, ফ্লাট ইত্যাদি ক্রয় করে। গ্রাহক ভাড়ার ভিত্তিতে তা ব্যবহার করে এবং ব্যাংকের অংশের মূল্য কিস্তিতে পরিশোধ করে তার মালিকানা অর্জন করে। পণ্য বা মালামাল ক্রয়ের আগে এর প্রকৃত মূল্য, মাসিক ভাড়া, ব্যাংকের অংশের মূল্য পরিশোধের সময় সীমা এবং কিস্তির পরিমাণ ও জামানতের প্রকৃতি ইত্যাদি নির্ধারণ করে চুক্তি সম্পাদিত হয়।
ইসলামী ব্যাংকের কল্যাণমুখী কিছু বিনিয়োগ প্রকল্প :
গৃহ সামগ্রী প্রকল্প : সীমিত আয়ের চাকরিজীবী ও পেশাজীবীদেরকে গৃহ সামগ্রী ক্রয়ে সহায়তা করতে , তাদের জীবনের মান উন্নয়নে সাহায্য করা ও সুন্দর ও সৎ জীবন যাপনের সুযোগ সৃষ্টি করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এ প্রকল্পের আওতায় ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ, টেলিভিশন, রেডিও, টু ইন ওয়ান, মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টিউবওয়েল, স্বর্ণের অলংকার, মোবাইল সেট, টেলিফোন, এয়ার কুলা্র, এয়ারকন্ডিশনার, পার্সোনাল কম্পিউটার, ওয়াশিং মেশিন, খাট, আলমারি, সোফা সেট, ওয়ারড্রব, কার্পেট ইত্যাদি আসবাবপত্র সেলাই মেশিন, ওভেন, ব্লেন্ডার, প্রেসার কুকার ইত্যাদি রান্নাঘরে ব্যবহারযোগ্য সামগ্রী। বই ও কম্পিউটার সহ ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা সরঞ্জাম এবং গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ক্রয়ের জন্য সহজ কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য বিনিয়োগ সুবিধা দেয়া হয়।
ডাক্তার বিনিয়োগ প্রকল্প : মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য পাস করা নবীন ডাক্তারদের আত্মকর্মসংস্থান, চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন ও সর্বস্তরের জনসাধারণের নিকট আধুনিক চিকিৎসার সুযোগ পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে এ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ডাক্তারদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য জেলা ও উপজেলা শহরে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ক্লিনিক, চেম্বারসহ ফার্মেসি করে দেয়া, এমনকি রোগী দেখার সুবিধার জন্য মোটরসাইকেল কিনে দেয়া। এছাড়াও প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরির জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম কেনার জন্য সহজ শর্তে বিনিয়োগ দেওয়া হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসা বিনিয়োগ প্রকল্প: শহর ও গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী উদ্যোক্তাদের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও আত্ম কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে যথাযথ অবদান রাখার লক্ষ্যে এ প্রকল্প চালু হয়েছে। ব্যাংক শাখার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে গবাদি পশুপালন, মৎস্য খামার, কৃষি খামার কৃষিজাত পণ্যের প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষি ব্যবসা, বিভিন্ন সামগ্রী নির্মাণ ও উৎপাদন, ব্যবসা বা দোকান, পরিবহন কৃষি সরঞ্জাম, ফটোস্ট্যাট মেশিন, মুদ্রণ শিল্পের জন্য কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, সেলাই মেশিন, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের জন্য মেশিনারি ইত্যাদি খাতে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা হয়।
গৃহায়ন বিনিয়োগ প্রকল্প :দেশের বর্তমান আবাসন সমস্যা লাঘবে এবং সীমিত আয়ের চাকরিজীবী গ ওপেশাজীবীদের গৃহায়নে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে গৃহায়ণ বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করা হয়েছে । এ প্রকল্পের আওতায় ্নিজ জমিতে নতুন বাড়ি নির্মাণ, নির্মিত বাড়ি সম্প্রসারণ ও নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হয়।
রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম : এ কর্মসূচির আওতায় গৃহায়ন বিনিয়োগ প্রকল্পের বাইরে অন্যান্য পেশাজীবী, চাকরিজীবী ব্যবসায়ীর বাড়ি নির্মাণ ও বর্ধিতকরণ। ব্যবসা কেন্দ্র, বিপনী বিতান নির্মাণ, অ্যাপার্টমেন্ট ফ্ল্যাট নির্মাণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হিসাবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে দেশের সকল পৌর এলাকায় অবস্থিত শাখা সমূহের কমান্ড এরিয়ার মধ্যে বিনিয়োগ প্রদান করা হয়ে থাকে।
পরিবহন বিনিয়োগ প্রকল্প : সড়ক ও নৌপরিবহন ব্যবসায় নিয়োজিত অভিজ্ঞ সফল ব্যবসায়ী ওই খাতে যোগ্য নতুন উদ্যোক্তাদের এ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন প্রকার যানবাহন করাই সহজ শর্তে বিনিয়োগ সুবিধা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে বহুজাতিক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী সংস্থা এবং সচ্ছল চাকরি ও পেশাজীবীদের লিজিং পদ্ধতিতে বিভিন্ন প্রকার যানবাহন মালিকানা লাভের সুবিধা সহ ভাড়ায় দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
আরো পড়ুনঃ
কার বিনিয়োগ প্রকল্প : মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও পরিবহন সমস্যা লাঘবের উদ্দেশ্যে পরিবহন বিনিয়োগ প্রকল্পের পাশাপাশি কার বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বহুজাতিকসহ প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়িক সংস্থার এক্সিকিউটিভ এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাসহ সচ্ছল পেশাজীবীদেরকে সহজ শর্তে ব্যক্তিগত গ্যারান্টি এর বিপরীতে প্রাইভেটকার কেনার জন্য বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হয়।
পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প : আদর্শ গ্রাম বাংলাদেশের প্রাণ, আদর্শ গ্রাম উন্নয়নে ইসলামী ব্যাংক এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় পল্লী এলাকায় দারিদ্র বিমোচন, কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ফসল উৎপাদন, কৃষি সরঞ্জাম ক্রয়, গ্রামীণ পরিবহন, হস্তচালিত অগভীর নল্কুপ, গৃহ নির্মাণ, ক্ষুদ্র ব্যবসা, পশুপাখি পালনসহ বিভিন্ন খাতে সহজ শর্তে বিনিয়োগ সুবিধা দেয়া হয়।
কৃষি সরঞ্জাম বিনিয়োগ প্রকল্প : কৃষকদের কৃষি পণ্য উৎপাদনে সহায়তা প্রদান ও গ্রামীন বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কৃষি সরঞ্জাম প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় সহজ শর্তে পাওয়ার টিলার, পাওয়ার পাম্প, শ্যালো টিউবওয়েল, মাড়াই কলসহ বিভিন্ন কৃষি সরঞ্জাম দেওয়া হয়।
ক্ষুদ্র শিল্প বিনিয়োগ প্রকল্প : যে সকল উদ্যোক্তা নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা বা পুরাতন শিল্প পুনরায় চালু করতে আগ্রহী তাদেরকে এ বিনিয়োগ প্রকল্পর আওতায় খাদ্য ও কৃষি নির্ভর শিল্প, প্লাস্টিক ও রাবার শিল্প, বনজ ও আসবাবপত্র শিল্প, প্রকৌশল শিল্প, চামড়া শিল্প, রাসায়নিক শিল্প, বস্ত্র শিল্প, প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, সেবা শিল্প, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি শিল্প, কম্পিউটার প্রযুক্তি শিল্প, কাগজ উৎপাদন শিল্প, হস্তশিল্প মৎস্য প্রশিক্ষণ খামার, ছিদ্রযুক্ত ই্ট, ছাদের টাইলস এবং ব্যাংকের কাছ লাভজনক হিসেবে গ্রহণযোগ্য যে কোন ক্ষুদ্র শিল্প সহ বিভিন্ন শিল্প খাতে বিনিয়োগ সুবিধা দেয়া হয়।
মিরপুর সিল্ক ওই ভাত ইনভেস্টমেন্ট স্কিম : রাজধানী ঢাকার মিরপুর এলাকায় রেশম বুনন শিল্পে নিয়োজিত ব্যক্তিদের সহযোগিতা প্রদানের উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প চালু করা হয়েছে । এর আওতায় বিশেষ করে চলতি মূলধনের প্রয়োজন পূরণএ যন্ত্রপাতি ক্রয়, নতুন উদ্যোক্তা উন্নয়ন বিভিন্ন আধুনিক ডিজাইনের পণ্য উৎপাদনের সহযোগিতা বিনিয়োগ সুবিধা দেওয়া হয়।
বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিময়ঃ
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক বিনিমায়ের ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখছে। ইসলামী ব্যাংকের বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যক্রম সাধারণত তিন ভাগে বিভক্তঃ
১। আমদানি বাণিজ্য
২। রপ্তানি বাণিজ্য
৩। বৈদেশিক রেমিটেন্স
ইসলামী ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্য কার্যকর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন জন্য সুদীর্ঘ সময়ে বিশ্বব্যাপী সুবিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে।
আমাদের শেষ কথা
এতক্ষন আমরা আপনাদের জানার সুবিধার্থে ইসলামী ব্যাংকের পরিচিতি আলোচনা করেছি। আশা করি ইসলামী ব্যাংক কিও কেন এ বিষয়ে আপনারা জ্ঞানলাভ করতে সমাপ্ত হয়েছেন। এ বিষয়ে আরো জানতে হলে আমাদের এ আর্টিকেলটি সম্পূর্ণরূপে পাঠ করুন।
আরো বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। তাহলে নিত্যনতুন ওয়ান্টেড সম্বন্ধে ধারণা পাবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url