এলার্জি জাতীয় খাদ্য কোনগুলি- এলার্জি রোগের চিকিৎসা কি
এলার্জি জাতীয় খাদ্য কোনগুলি- এলার্জি রোগের চিকিৎসা কি
আজ আমরা অ্যালার্জি বিষয়ে এই নিবন্ধে আলোচনা করব। আপনি অবগত আছেন বাংলাদেশের লাখ লাখ মানুষের কাছে এলার্জি একটি অসহনীয় রোগ। হাসি থেকে শুরু করে খাদ্য এবং ঔষধের নানাবিধ প্রতিক্রিয়া এবং শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এলার্জি মানুষের জীবনকে সহ ও জটিল করে তোলে।
আপনি আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করুন এবং এলার্জির বিষয়ে জানার চেষ্টা করুন। তাহলে আপনি সতর্ক হতে পারবেন এবং আপনার আশেপাশের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধুবান্ধবদের কেউ সতর্ক করতে পারবে না। আমাদের এই ওয়েবসাইটে সাথে থাকুন।
এলার্জি জাতীয় খাদ্য কোনগুলি- এলার্জি রোগের চিকিৎসা কি
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) যখন নির্দিষ্ট কিছু পদার্থকে ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তখন তাকে এলার্জি বলা হয়। এই প্রতিক্রিয়াটি সাধারণত খাবার, ধুলাবালি, পরাগ, ওষুধ, অথবা প্রাণীজ উৎস থেকে সৃষ্ট হয়। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব এলার্জির কারণ, এলার্জি জাতীয় খাবার কোনগুলি, লক্ষণ ও প্রতিকারসহ সম্পূর্ণ একটি ধারণা।
এলার্জি কী এবং কেন হয়, এলার্জির কারণ
এলার্জি হলো একধরনের হাইপারসেন্সিটিভ প্রতিক্রিয়া। দেহের ইমিউন সিস্টেম সাধারণত ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা দেয়, কিন্তু এলার্জির ক্ষেত্রে এটি নিরীহ বস্তু যেমন—আখরোট, দুধ বা ধুলাবালিকে হুমকি হিসেবে দেখে। তখন এটি হিস্টামিনসহ নানা রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ করে এবং তাতে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়।
আরো পড়ুনঃ
যে সকল কারণে বা সংস্পর্শে এলে এলার্জি হয় বা দেখা দেয় সেগুলি তালিকা নিচে দেওয়া হলোঃ
১। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হলে।
২। নির্দিষ্ট কিছু খাবারের কারণে।
৩। ধুলাবালির কারণে।
৪। গরম অথবা ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণ।
৫। অতিরিক্ত ঘামের কারণ।
৬। গৃহপালিত পশু পাখির সংস্পর্শে আসলে
৭।পরাগ রেণু ও ফুলের মূল কারণ।
৮। তির্যক সূর্য রশ্মির কারণে।
৯। বিভিন্ন রকমের মোল্ড বা ছত্রাকের কারণে
১০। নানা রকম ঔষধ সব সময়ের কারণে।
১১। বিভিন্ন রকম কীট নাশক ওষধের কারণ।
১২।স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে।
এলার্জি জাতীয় খাবারের তালিকা
খাবারভিত্তিক এলার্জি শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে খুবই সাধারণ। অনেক সময় একটি নির্দিষ্ট খাবার গ্রহণ করলেই দেহে তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। নিচে আমরা এমন কিছু সাধারণ খাবারের তালিকা দিচ্ছি যেগুলোর কারণে এলার্জি হতে পারে:
১. দুধ : গরুর দুধ শিশুদের মধ্যে এলার্জির অন্যতম প্রধান কারণ। এটি দুধের প্রোটিন যেমন ক্যাসেইন বা ওয়েহ প্রোটিনের কারণে হতে পারে। উপসর্গের মধ্যে আছে: পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, চুলকানি, বা র্যাশ।
২. ডিম :ডিমের সাদা অংশে থাকা প্রোটিনের কারণে অনেকের এলার্জি হয়। এটি শিশুদের মধ্যে সাধারণ এবং বয়সের সাথে অনেক সময় কমে যায়।
৩. বাদাম : বিশেষ করে আখরোট, কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ইত্যাদি এলার্জির অন্যতম কারণ। কখনও কখনও এটি প্রাণঘাতী অ্যানাফাইল্যাক্সিস প্রতিক্রিয়াও তৈরি করতে পারে।
৪. চিনাবাদাম : চিনাবাদাম থেকে সৃষ্ট এলার্জি অনেক সময় খুবই মারাত্মক হয় এবং সারা জীবন থেকে যেতে পারে। এজন্য অনেক শিশু বিদ্যালয়ে চিনাবাদাম নিষিদ্ধ রাখা হয়।
৫. সয়া : সয়াবিন ও এর উৎপাদিত খাদ্য (যেমন টোফু) অনেকের মধ্যে এলার্জি সৃষ্টি করতে পারে। এটি সাধারণত শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
৬. গম : গমে থাকা প্রোটিন গ্লুটেন অনেকের মধ্যে এলার্জির কারণ হতে পারে। এটি মূলত গ্লুটেন সংবেদনশীলতা ও সেলিয়াক ডিজিজের সঙ্গে সম্পর্কিত।
৭. মাছ ও শেলফিশ: রূপচাঁদা, ইলিশ, চিংড়ি, কাঁকড়া ইত্যাদি অনেকের জন্য মারাত্মক এলার্জির কারণ হতে পারে।
৮. কিছু ফলমূল: স্ট্রবেরি, কিউই, পেঁপে, আনারস ইত্যাদি কিছু ফল খেলে এলার্জি দেখা দিতে পারে।
৯। চিংড়িঃ চিংড়ি মাছ এলার্জি হওয়ার জন্য একটি বড় কারণ। অনেকের চিংড়ি মাছ দেখলে অথবা খেলে এলার্জি হয়। তাদের চিংড়ি মাছ থেকে বিরত থাকা উচ...
১০। বেগুনঃ বেগুন এলার্জির জন্য বিশেষভাবে দায়ী। এমন অনেক লোক রয়েছে যারা বেগুন খেতে পারেনা। বেগুন খেলে তাদের এলার্জিতে ভরে যায়। তাই তাদের বেগুন খাওয়া উচিত না।
১১। ইলিশ মাছঃ ইলিশ মাছও এলার্জির জন্য বিশাল ভূমিকা রাখে। সিংহভাগ লোকের লোকের ইলিশ মাছের কারনে এলার্জি হয়ে থাকে।
১২। গরুর গোসতঃ অনেক মানুষ আছে যারা গরুর গোশত খেলেই এলার্জিতে পুরো শরীর খেয়ে যায়। তাই তাদের অনেক হিসাব-নিকাশ করে গরুর গোস্ত খাওয়া উচিত।
এলার্জির লক্ষণসমূহ
খাদ্য এলার্জির লক্ষণ বিভিন্নরকম হতে পারে। সাধারণত নিচের উপসর্গগুলো দেখা যায়:
ত্বকে ফুসকুড়ি বা র্যাশ, চুলকানি বা ফোলা, ঠোঁট, মুখ, গলা বা জিহ্বা ফোলা, বমি বমি ভাব, পেট ব্যথা বা ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি, চোখে পানি পড়া বা চুলকানি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা হাঁচি। সবচেয়ে গুরুতর উপসর্গ হলো অ্যানাফাইল্যাক্সিস, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। এতে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে, শ্বাসরোধ হতে পারে এবং অবচেতনতা দেখা দিতে পারে। এটি জরুরি চিকিৎসা দাবি করে।
এলার্জি নির্ণয় পদ্ধতি
এলার্জি আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কিছু পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে: ১। স্কিন প্রিক টেস্ট (Skin Prick Test): ত্বকে অল্প পরিমাণ এলার্জি জাতীয় পদার্থ দেওয়া হয়। ২। রক্ত পরীক্ষা (IgE Test): নির্দিষ্ট এলার্জেনের বিরুদ্ধে ইমিউন সিস্টেমের প্রতিক্রিয়া বোঝা যায়।৩। খাবার এলিমিনেশন ডায়েট: সন্দেহভাজন খাবার কিছুদিন খাওয়া বন্ধ রেখে লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা হয়। ৪। অ্যাওয়েডেন্স টেস্টিং: নিরাপদ পরিবেশে সন্দেহভাজন খাবার অল্প মাত্রায় খাইয়ে প্রতিক্রিয়া দেখা হয়।
এলার্জির চিকিৎসা ও প্রতিকার
বর্তমানে এলার্জির স্থায়ী নিরাময় নেই, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিকার দেওয়া হলো:
আরো পড়ুনঃ
১. এলার্জেন এড়িয়ে চলাঃ সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো এলার্জির কারণ শনাক্ত করে তা এড়িয়ে চলা। যেমন: চিনাবাদামে এলার্জি থাকলে সেই খাবার এড়ানো।
২. অ্যান্টিহিস্টামিনঃ এটি এলার্জির লক্ষণ প্রশমনে ব্যবহৃত হয়। বাজারে সহজলভ্য কিছু অ্যান্টিহিস্টামিন হলো: সিট্রিজিন, লোরাটাডিন।
৩. ইনহেলার ও নাক স্প্রেঃ যারা শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত এলার্জিতে ভোগেন, তাদের জন্য ইনহেলার বা স্প্রে ব্যবহৃত হয়।
৪. ইপিনেফ্রিন ইনজেকশন ঃ অ্যানাফাইল্যাক্সিস প্রতিক্রিয়ার ক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ ইপিনেফ্রিন ইনজেকশন প্রয়োগ করতে হয়।
৫. ইমিউন থেরাপিঃ ধীরে ধীরে রোগীকে এলার্জেনের সংস্পর্শে এনে ইমিউন সিস্টেমকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এটি দীর্ঘমেয়াদি পদ্ধতি।
শিশুদের মধ্যে এলার্জি নিয়ন্ত্রণে করণীয়
নতুন খাবার ধীরে ধীরে পরিচয় করান। এলার্জি জাতীয় খাবার খাওয়ানোর আগে পেডিয়াট্রিশিয়ানের সঙ্গে পরামর্শ করুন। এলার্জি থাকলে স্কুলে বা ডে কেয়ারে জানিয়ে দিন। ইপিনেফ্রিন পেন সবসময় সঙ্গে রাখুন (যদি প্রয়োজন হয়)।
প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া প্রতিকার
মধু: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁচা মধু হালকা এলার্জির বিরুদ্ধে সহায়ক হতে পারে। আদা ও তুলসি চা: শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত এলার্জিতে উপশম দেয়। কালোজিরা ও মধু: শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। তবে এসব ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
লেখকের শেষ বক্তব্য
এলার্জি একটি অত্যন্ত সাধারণ কিন্তু উপেক্ষা না করার মতো শারীরিক প্রতিক্রিয়া। এটি কখনো কখনো গুরুতরও হতে পারে। সঠিকভাবে এলার্জির উৎস চিহ্নিত করে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। তাই এলার্জি জাতীয় খাবার সম্পর্কে সচেতন হোন, প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলুন এবং প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।
এতক্ষন আপনি আমাদের এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আপনি এটা পাঠ করে অনেক কিছু জানতে পেরেছেন। আশা করি আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। আরও নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে হলে আমাদের এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এই বিষয়ে আপনার বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়-স্বজনের সাথে শেয়ার করুন তারাও এলার্জি বিষয়ে জানতে পারবে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url