বিল গেটস কে, তিনি এত বিখ্যাত কেন
বিল গেটস কে, তিনি এত বিখ্যাত কেন
আপনারা অনেকেই বিল গেটস এর নাম শুনেছেন। তিনি বিশ্বব্যাপী বিখ্যাত ব্যক্তি হইতেছেন। তার জীবন ও কর্ম সফলতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে। আমি তার জন্ম থেকে তার শৈশব শিক্ষা কর্ম সফলতা সব বিষয়ে আলোচনা পেশ করব।
আপনি যদি বিল গেটস সম্বন্ধে আরো বেশি জানতে চান তাহলে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অধ্যয়ন করুন । তাহলে বিল গেটস সম্বন্ধে বিস্তারিত জানতে পারবেন এবং আপনার চাহিদা মত তথ্য পাবেন ইনশাল্লাহ।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বিল গেটস কে, তিনি এত বিখ্যাত কেন
বিল গেটস এর শৈশব ও শিক্ষা জীবন
বিল গেটস কর্তৃক মাইক্রোসফটের জন্ম
বিল গেটসের সাফল্য এবং বিত্ত
বিল গেটস এর জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড
বিল গেটস এর প্রযুক্তিতে প্রভাব
বিল গেটস এর লেখালেখি ও চিন্তাভাবনা
বিল গেটস এর ব্যক্তিগত জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি
বিল গেটস কেন এত বিখ্যাত
বিল গেটস এর ব্যবসায়িক কৌশল এবং নেতৃত্ব
বিল গেটস এর মাইক্রোসফট বনাম প্রতিদ্বন্দ্বী
বিল গেটস প্রযুক্তি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ
বিল গেটসঃ সমালোচনা ও বিতর্ক
বিল গেটস এর ভবিষ্যৎ চিন্তা ও আদর্শ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিল গেটস
বিল গেটস কে, তিনি এত বিখ্যাত কেন
বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি বিপ্লবের অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে বিল গেটসের নাম সর্বাগ্রে উঠে আসে। তার উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা, ব্যবসায়িক কৌশল এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি শুধু একজন ধনী ব্যক্তি নন, বরং আধুনিক যুগের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে বিবেচিত। এই প্রবন্ধে আমরা জানব কে এই বিল গেটস, কিভাবে তিনি এত বিখ্যাত হয়ে উঠলেন, এবং সমাজে তার অবদান কতটা গভীর।
বিল গেটস এর শৈশব ও শিক্ষা জীবন
বিল গেটসের পুরো নাম উইলিয়াম হেনরি গেটস তৃতীয়। তিনি ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন একজন প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী এবং মা ছিলেন একজন ব্যাংক বোর্ডের সদস্য। ছোটবেলা থেকেই গেটস ছিলেন প্রচন্ড মেধাবী ও কৌতুহলী। তিনি খুব অল্প বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
আরো পড়ুনঃ
হাইস্কুলে পড়াকালীন সময়েই গেটস প্রথম সফটওয়্যার তৈরি করেন। তার সেই আগ্রহই এক সময় তাকে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যায়। যদিও তিনি পরবর্তীতে পড়াশোনা শেষ না করেই হার্ভার্ড ছেড়ে দেন, কিন্তু এই সিদ্ধান্তই তাকে ইতিহাসের অংশ বানিয়ে দেয়।
বিল গেটস কর্তৃক মাইক্রোসফটের জন্ম
১৯৭৫ সালে, স্কুল বন্ধু পল অ্যালেনের সাথে মিলে বিল গেটস প্রতিষ্ঠা করেন “Microsoft” নামক সফটওয়্যার কোম্পানি। এই প্রতিষ্ঠানই পরে হয়ে ওঠে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী টেকনোলজি কোম্পানিগুলোর একটি। মাইক্রোসফটের তৈরি অপারেটিং সিস্টেম ‘MS-DOS’ এবং পরে ‘Windows’ বাজারে বিপ্লব ঘটায়। একসময় বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি কম্পিউটারেই উইন্ডোজ ব্যবহৃত হতো।
গেটসের দূরদর্শিতা এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা মাইক্রোসফটকে শীর্ষে নিয়ে যায়। তিনি শুধুমাত্র প্রযুক্তির অগ্রদূতই নন, বরং এক যুগান্তকারী উদ্যোক্তা হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেন।
বিল গেটসের সাফল্য এবং বিত্ত
১৯৮৭ সালে মাত্র ৩১ বছর বয়সে তিনি ফোর্বস ম্যাগাজিনে বিলিয়নিয়ার হিসেবে স্থান পান। এক সময় বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি হিসেবে বিল গেটসের নাম টানা কয়েক বছর ধরে ফোর্বসের তালিকায় শীর্ষে ছিল। তার সম্পদের পরিমাণ একসময় ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যায়।
তবে গেটসের পরিচিতি কেবল সম্পদের কারণে নয়। তার দৃষ্টিভঙ্গি, সমাজ ও মানবতার কল্যাণে কাজ করার আগ্রহ এবং দূরদর্শী পরিকল্পনাই তাকে আরও উচ্চতায় নিয়ে গেছে।
বিল গেটস এর জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড
২০০০ সালে বিল ও তার স্ত্রী মেলিন্ডা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন ‘Bill & Melinda Gates Foundation’। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি দাতব্য সংস্থা হিসেবে পরিচিত। এই সংস্থা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং টিকাদান কর্মসূচিতে কাজ করছে বিশ্বব্যাপী। আফ্রিকাসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে যক্ষ্মা, এইচআইভি/এইডস এবং ম্যালেরিয়ার মতো রোগ প্রতিরোধে তাদের অবদান অনন্য।
২০২০ সালে COVID-19 মহামারির সময়েও গেটস ফাউন্ডেশন ভ্যাকসিন উন্নয়ন ও বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বিল গেটস এর প্রযুক্তিতে প্রভাব
বিল গেটস আধুনিক কম্পিউটিং ধারণাকে জনগণের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। ১৯৮০ ও ৯০ দশকে যখন কম্পিউটার শুধু বড় প্রতিষ্ঠানেই ব্যবহার হতো, তখন তিনি ঘরে ঘরে কম্পিউটার পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছিলেন। আজকের ডিজিটাল বিশ্বে ব্যক্তিগত কম্পিউটার, ইন্টারনেট, স্মার্টফোন - সবকিছুর পেছনেই কোনো না কোনোভাবে বিল গেটসের অবদান রয়েছে।
বিল গেটস এর লেখালেখি ও চিন্তাভাবনা
গেটস একজন দক্ষ লেখকও। তিনি ‘The Road Ahead’, ‘Business @ the Speed of Thought’, এবং ‘How to Avoid a Climate Disaster’ নামক বই লিখেছেন। এসব বইয়ে ভবিষ্যতের প্রযুক্তি, ব্যবসা এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ পেয়েছে।
তার প্রতিটি লেখাই পাঠকদের চিন্তা করার একটি নতুন জানালা খুলে দেয়। তিনি প্রযুক্তি ও নীতিনির্ধারনের মাধ্যমে কিভাবে পৃথিবীকে আরও উন্নত ও সমানতর করা যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা করেন।
বিল গেটস এর ব্যক্তিগত জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি
বিল গেটসের এক স্ত্রী ছিলেন, মেলিন্ডা গেটস (পুরো নাম: মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস)। তারা ১৯৯৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং ২০২১ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়। তাদের তিন সন্তান রয়েছে: ১। জেনিফার ক্যাথরিন গেটস (Jennifer Katharine Gates) – জন্ম ১৯৯৬ সালে ২। ররি জন গেটস (Rory John Gates) – জন্ম ১৯৯৯ সালে ৩। ফিবি অ্যাডেল গেটস (Phoebe Adele Gates) – জন্ম ২০০২ সালে অর্থাৎ, বিল গেটসের এক ছেলে ও দুই মেয়ে।
বিল গেটস সবসময়ই একটি সাধারণ জীবনযাপন করার চেষ্টা করেছেন। প্রযুক্তির দুনিয়ায় যতই খ্যাতি থাকুক না কেন, তিনি কখনও জাঁকজমকপূর্ণ জীবনধারা গ্রহণ করেননি। তিনি নতুন কিছু শেখা, বই পড়া ও সমস্যার সমাধান বের করাকে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ মনে করেন।
২০২১ সালে মেলিন্ডার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পরও তারা একসাথে তাদের ফাউন্ডেশন চালিয়ে যাচ্ছেন, যা তার দায়িত্ববোধের প্রমাণ।
বিল গেটস কেন এত বিখ্যাত
বিল গেটসের খ্যাতির পেছনে কয়েকটি কারণ আছেঃ ১। প্রযুক্তিগত অবদান: গেটসের উদ্ভাবন ও নেতৃত্বই মাইক্রোসফটকে শীর্ষে পৌঁছায়। ২। উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতা: তরুণ বয়সে বড় ঝুঁকি নিয়েই প্রতিষ্ঠা করেন বিশাল কোম্পানি। ৩। মানবিক কার্যক্রম: তার দান ও সামাজিক কর্মকাণ্ড তাকে শুধু ধনী নয়, মানবিক ব্যক্তিত্বেও পরিণত করেছে। ৪। ভবিষ্যতদ্রষ্টা হিসেবে ভাবনা: প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে দুনিয়া বদলানো যায়, তা তিনি বহু আগেই বুঝেছিলেন। ৫। শিক্ষার প্রতি ভালোবাসা: নিজে পড়াশোনা শেষ না করলেও সারাজীবন জ্ঞান ছড়িয়ে দিয়েছেন অন্যদের মাঝে।
বিল গেটস এর ব্যবসায়িক কৌশল এবং নেতৃত্ব
বিল গেটসের ব্যবসায়িক সফলতার অন্যতম মূল কারণ ছিল তার সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং প্রতিযোগীদের থেকে এক ধাপ এগিয়ে থাকার কৌশল। মাইক্রোসফটের শুরুতে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে হার্ডওয়্যারের চেয়ে সফটওয়্যারের গুরুত্ব ভবিষ্যতে বেশি হবে। তিনি IBM-এর মতো বিশাল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ‘MS-DOS’ সরবরাহ করার মাধ্যমে মাইক্রোসফটকে বিশাল পরিসরে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
তিনি প্রায় সবসময়ই প্রযুক্তি বাজারের প্রবণতা বুঝে আগেভাগেই পদক্ষেপ নিতেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি দ্রুত বুঝেছিলেন যে গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস (GUI) ভবিষ্যতের অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অপরিহার্য হবে। সেই অনুযায়ী তৈরি হয় 'Windows', যা এক সময় বিশ্বের প্রায় প্রতিটি কম্পিউটারে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।
বিল গেটস এর মাইক্রোসফট বনাম প্রতিদ্বন্দ্বী
গেটসের ক্যারিয়ারে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে। Apple, IBM, এবং পরবর্তীকালে Google ও Amazon-এর মতো প্রযুক্তি জায়ান্টদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা চলেছে। Apple-এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসের সঙ্গে তার সম্পর্ক অনেক সময় উত্তপ্ত, আবার কখনো বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল।
১৯৯৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকার মাইক্রোসফটের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসা করার অভিযোগে মামলা করে। অনেকেই বলেছিলেন, গেটসের নেতৃত্বাধীন কোম্পানি বাজারে প্রতিযোগিতাকে বাধা দিচ্ছে। যদিও এই মামলার ফলাফল মাইক্রোসফটকে ভাঙার প্রয়োজন হয়নি, তবে এটি প্রযুক্তি দুনিয়ায় একটি বড় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়ায়।
বিল গেটস প্রযুক্তি ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে দক্ষ
বিল গেটস শুধুমাত্র প্রযুক্তি জগতেই নয়, অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রেও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার পাশাপাশি একজন মানবহিতৈষী, বিনিয়োগকারী এবং লেখক হিসেবেও পরিচিত। নিচে তার প্রযুক্তি ছাড়াও অন্যান্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার উল্লেখ করা হলো: ১। মানবসেবা ও দান: বিল গেটস এবং তার সাবেক স্ত্রী মেলিন্ডা গেটস মিলে প্রতিষ্ঠা করেন Bill & Melinda Gates Foundation, যা বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ দাতব্য সংস্থা। এই সংস্থার মাধ্যমে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হয়। ২। লেখালেখি: তিনি বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন, যেমন The Road Ahead, Business @ the Speed of Thought, এবং How to Prevent the Next Pandemic, যেখানে তিনি ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য এবং বিশ্ব উন্নয়ন নিয়ে তার চিন্তাধারা তুলে ধরেছেন।
৩। ভবিষ্যদ্বাণী ও বিশ্লেষণ ক্ষমতা: গেটস প্রায়শই ভবিষ্যতের বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করে থাকেন। যেমন, ২০১৫ সালে তিনি একটি টেড টকে মহামারী নিয়ে সতর্ক করেছিলেন, যা কোভিড-১৯-এর সময় প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। ৪। পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ: তিনি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রযুক্তি এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে কাজ করছেন। তার লেখা How to Avoid a Climate Disaster বইটিতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ৫। বিনিয়োগ দক্ষতা: প্রযুক্তি খাত ছাড়াও, গেটস বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে চলেছেন, যেমন পরিচ্ছন্ন শক্তি, কৃষি প্রযুক্তি, এবং স্বাস্থ্যসেবা।
বিল গেটসঃ সমালোচনা ও বিতর্ক
যদিও বিল গেটস একজন সম্মানিত ব্যক্তি, তবুও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা উঠেছে। বিশেষ করে COVID-19 মহামারির সময় গেটস অনেক ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন। অনেকেই (ভিত্তিহীনভাবে) দাবি করেন যে তিনি ভ্যাকসিনের মাধ্যমে মানুষকে ট্র্যাক করার চেষ্টা করছেন। যদিও এ ধরনের দাবির কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই, তথাপি তা সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার পায়।
এছাড়াও, কিছু পুরনো কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে মাইক্রোসফটে তার নেতৃত্ব খুব কঠোর ছিল এবং তিনি প্রায়ই সহকর্মীদের সামনে কঠিন সমালোচনা করতেন। তবে গেটস পরবর্তীতে স্বীকার করেছেন, তরুণ বয়সে তিনি অনেক সময় অপ্রয়োজনীয়ভাবে রাগান্বিত হতেন এবং তিনি শিখেছেন কিভাবে মানুষকে আরও ভালোভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়।
বিল গেটস এর ভবিষ্যৎ চিন্তা ও পরিকল্পনা
বিল গেটস ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সবসময়ই দূরদর্শী চিন্তা করেন এবং মানবজাতির উন্নতির জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার ভবিষ্যৎ চিন্তা ও পরিকল্পনা মূলত প্রযুক্তি, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ ও শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। ১. স্বাস্থ্য ও মহামারী প্রতিরোধঃ বিল গেটস স্বাস্থ্যখাতে বিপ্লব ঘটানোর লক্ষ্যে কাজ করছেন। তার প্রতিষ্ঠান বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন বিভিন্ন রোগের টিকা উন্নয়ন ও মহামারী প্রতিরোধে কাজ করছে। তিনি ভবিষ্যতে আরও উন্নত ও সাশ্রয়ী টিকা তৈরির পরিকল্পনা করছেন যা বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যপীড়িত দেশগুলোর জন্য সহজলভ্য হবে।
২. জলবায়ু পরিবর্তন ও নবায়নযোগ্য শক্তিঃ গেটস জলবায়ু পরিবর্তনকে মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে দেখেন। তিনি Breakthrough Energy নামক সংস্থা গঠন করেছেন, যা নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করছে। তার লক্ষ্য হল গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা, যা বিশ্বকে পরিবেশবান্ধব করে তুলবে। ৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ও প্রযুক্তির ভবিষ্যৎঃ বিল গেটস মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতে মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন আনবে। তিনি AI-কে ইতিবাচকভাবে ব্যবহারের জন্য বিনিয়োগ করছেন, যাতে এটি স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করতে পারে।
৪. শিক্ষা ও ডিজিটাল রূপান্তরঃ গেটস শিক্ষা খাতেও নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগের পক্ষে। তিনি অনলাইন শিক্ষাকে সহজলভ্য করতে কাজ করছেন এবং উন্নতমানের শিক্ষা প্রতিটি শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। ৫. মানবকল্যাণ ও দাতব্য কার্যক্রমঃ তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তার সম্পদের অধিকাংশই দাতব্য কাজে ব্যয় করবেন। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব উন্নয়নে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিল গেটসের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুধুমাত্র প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তিনি মানবজাতির সার্বিক কল্যাণের দিকেও মনোযোগ দিচ্ছেন।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বিল গেটস
বিল গেটসের প্রভাব শুধু পশ্চিমা বিশ্বে সীমাবদ্ধ নয়। তার ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশেও ব্যাপক কাজ করেছে। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতে — টিকাদান, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা প্রভৃতি ক্ষেত্রে গেটস ফাউন্ডেশনের বিনিয়োগ এবং কারিগরি সহায়তা লক্ষণীয়।
আরো পড়ুনঃ
বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় মোবাইল হেলথ, ডেটা কালেকশন, এবং ভ্যাকসিন সংরক্ষণে প্রযুক্তি ব্যবহার করে কার্যকারিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এসবের পেছনে গেটস ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য গেটসের বার্তাঃ বিল গেটস তরুণ প্রজন্মের প্রতি সবসময়ই আশাবাদী। তিনি মনে করেন, আজকের তরুণরাই আগামী দিনের পৃথিবীকে পরিবর্তন করবে। তার কিছু বিখ্যাত উক্তি হলোঃ “Don’t compare yourself with anyone in this world. If you do so, you are insulting yourself.”“If you are born poor it's not your mistake, but if you die poor it's your mistake.” “I choose a lazy person to do a hard job. Because a lazy person will find an easy way to do it.”
এইসব উক্তির মাধ্যমে তিনি শিক্ষার্থীদের স্বাধীন চিন্তা, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং বাস্তবমুখী হওয়ার পরামর্শ দেন।
আমাদের শেষ মন্তব্য
বিল গেটসের জীবনের প্রতিটি ধাপ আমাদের শেখায়, সঠিক চিন্তা, কঠোর পরিশ্রম এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিশ্বকে বদলে দেওয়া যায়। তিনি শুধুমাত্র একজন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা বা ধনী ব্যক্তি নন, তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা, সমাজ পরিবর্তনের দূত।
তরুণদের জন্য তিনি এক অনুপ্রেরণার নাম। তার জীবন আমাদের শেখায়, বড় হতে হলে শুধু বড় স্বপ্ন দেখলেই হয় না । সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করতে হয়, ভুল থেকে শিখতে হয়, এবং সবার জন্য কিছু করতে হয়।
এতক্ষণ আমি আপনাদের সামনে বিল গেটস এর জীবন বৃত্তান্ত কর্ম সফলতা এবং বিখ্যাত হওয়ার কারণ উল্লেখ করেছি। আপনি আমাদের সাথে ধৈর্য ধরে থেকে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পাঠ করেছেন বিধায় আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ের উপর কন্টেন্ট লিখে এই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করি। আপনি ওইগুলি জানতে চাইলে tauhidullahit.com এই ওয়েবসাইটটি নিয়মিত ভিজিট করুন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url